খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) এবং শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) একটি তুলনামূলক নীতি ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন কর।
ভূমিকা
১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে এবং গণতন্ত্রের পুনঃযাত্রা শুরু হয়। এই গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে ১৯৯১ সালের নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক ছিল। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বিজয়ী হয় এবং বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠন করেন। তাঁর শাসনামল ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এরপর, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর প্রথম শাসনামল ছিল ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত।
এই দুটি শাসনামল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উভয় সরকারই নব্বইয়ের দশকের বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। তাঁদের গৃহীত নীতি ও কার্যক্রম বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। খালেদা জিয়ার শাসনামলে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধিত হয়। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সাথে গঙ্গার পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি এবং যমুনা সেতুর মতো বড় অবকাঠামো প্রকল্পের সমাপ্তির জন্য পরিচিত। এই দুই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম শাসনামলের নীতি ও কার্যক্রমের তুলনামূলক মূল্যায়ন করলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের একটি সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়।
প্রধান নীতি ও কার্যক্রমের তুলনামূলক বিশ্লেষণ
খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের নীতি ও কার্যক্রমের মধ্যে যেমন কিছু সাদৃশ্য ছিল, তেমনি বেশ কিছু ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট পার্থক্যও পরিলক্ষিত হয়। নিচে বিভিন্ন খাতের ওপর ভিত্তি করে একটি তুলনামূলক মূল্যায়ন করা হলো:
১. অর্থনৈতিক নীতি ও কার্যক্রম
বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামল (১৯৯১-৯৬): খালেদা জিয়ার সরকার একটি মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার দিকে মনোনিবেশ করে। এই সময়ে অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বেসরকারিকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়। উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সংস্কারগুলোর মধ্যে ছিল:
- মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রবর্তন: দেশের কর কাঠামোকে আধুনিক করার লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে ভ্যাট চালু করা হয়, যা সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- বেসরকারিকরণ বোর্ড প্রতিষ্ঠা: লোকসানে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ১৯৯৩ সালে বেসরকারিকরণ বোর্ড গঠন করা হয়।
- আর্থিক খাতে সংস্কার: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৯১ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং ১৯৯৩ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন প্রণয়ন করা হয়।
- বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য ১৯৯৩ সালে ঢাকার কাছে একটি নতুন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (EPZ) প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এই সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৪ থেকে ৪.৫ শতাংশের মধ্যে ছিল, যা একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য ইতিবাচক হিসেবে গণ্য হয়।
শেখ হাসিনার শাসনামল (১৯৯৬-২০০১): শেখ হাসিনার সরকারও অর্থনৈতিক সংস্কারের ধারা অব্যাহত রাখে, তবে এক্ষেত্রে সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই সময়ের প্রধান অর্থনৈতিক কার্যক্রমগুলো হলো:
- শিল্প নীতির আধুনিকীকরণ: বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করতে এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) আকর্ষণের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে নতুন শিল্প নীতি (New Industrial Policy) গ্রহণ করা হয়।
- অবকাঠামোগত উন্নয়ন: দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য যমুনা বহুমুখী সেতুর (বঙ্গবন্ধু সেতু) নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং ১৯৯৮ সালের জুনে এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই সেতু দেশের অর্থনীতিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা হয়। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
- খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন: তাঁর সরকারের অন্যতম বড় সাফল্য ছিল খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন।
এই সময়কালে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫.৫ শতাংশের উপরে ছিল এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল।
২. বৈদেশিক নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামল (১৯৯১-৯৬): খালেদা জিয়ার সরকার বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে প্রাচ্যের দিকে তাকানো (Look East Policy) নীতির ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা চালায়। এই সময়ে উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো:
- প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক: ভারতের সাথে সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা হলেও গঙ্গার পানি বণ্টনসহ বেশ কিছু অমীমাংসিত সমস্যা বিদ্যমান ছিল।
- জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ: এই সময়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শুরু করে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।
- আঞ্চলিক সহযোগিতা: দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ফোরামে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সক্রিয় ছিল।
শেখ হাসিনার শাসনামল (১৯৯৬-২০০১): শেখ হাসিনার সরকার প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই সময়কে বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে "অর্থনৈতিক কূটনীতি" (Economic Diplomacy) এর যুগ বলা হয়।
- গঙ্গার পানি চুক্তি: ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের বিরোধের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি ছিল শেখ হাসিনা সরকারের একটি বিশাল কূটনৈতিক সাফল্য।
- পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি: দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটায়। এই চুক্তির জন্য শেখ হাসিনা ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
- আঞ্চলিক জোট গঠন: এই সময়ে বাংলাদেশ বিমসটেক (BIMSTEC) এবং ডি-৮ (D-8) এর মতো নতুন অর্থনৈতিক জোটের সদস্যপদ লাভ করে, যা আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করে।
৩. শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন
বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামল (১৯৯১-৯৬): খালেদা জিয়ার সরকার শিক্ষাকে, বিশেষ করে নারী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো হলো:
- বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা: ১৯৯০ সালে প্রণীত আইন অনুসারে, ১৯৯৩ সাল থেকে সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়।
- নারী শিক্ষার প্রসার: দশম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের জন্য শিক্ষাকে অবৈতনিক ঘোষণা করা হয় এবং ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি কার্যক্রম চালু করা হয়, যা নারী শিক্ষায় একটি বিপ্লব নিয়ে আসে।
- শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধি: ১৯৯৪ সালে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ ৬০% বৃদ্ধি করা হয়, যা ছিল মোট বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ।
- সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি: ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচির মতো উদ্যোগের ফলে সাক্ষরতার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
শেখ হাসিনার শাসনামল (১৯৯৬-২০০১): শেখ হাসিনার সরকারও শিক্ষার প্রসার এবং নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সময়ের উদ্যোগগুলো হলো:
- নারী উন্নয়ন নীতি: নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি’ প্রণয়ন করা হয়।
- স্থানীয় সরকারে নারীর অংশগ্রহণ: ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মহিলাদের জন্য তিনটি সংরক্ষিত আসন চালু করা হয়, যা তৃণমূল পর্যায়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সহায়ক হয়।
- শিশু অধিকার সুরক্ষা: শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং তাদের উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে ‘জাতীয় শিশু কর্মপরিকল্পনা’ গৃহীত হয়।
- পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গুরুত্ব: সরকারের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) দারিদ্র্য বিমোচন এবং বেকার যুবক ও নারীদের জন্য ঋণ ও প্রশিক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
৪. রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রশাসনিক সংস্কার
বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামল (১৯৯১-৯৬): এই শাসনামলটি ছিল গণতন্ত্রে উত্তরণের একটি ক্রান্তিকাল। প্রধান রাজনৈতিক দিকগুলো হলো:
- সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা: ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন করা হয়।
- স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা: নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনের আইন পাস করা হয়। তবে, ১৯৯১ সালে উপজেলা ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়, যা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
- রাজনৈতিক অস্থিরতা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, যা হরতাল ও রাজনৈতিক সংঘাতে রূপ নেয়। এই অস্থিতিশীলতার কারণে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
শেখ হাসিনার শাসনামল (১৯৯৬-২০০১): শেখ হাসিনার সরকারকেও বিভিন্ন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়।
- ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের পথ সুগম করার জন্য কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়।
- পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন: নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি নির্বাচিত সরকার হিসেবে তার পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়।
- বিরোধী দলের আন্দোলন: এই সরকারের শেষ দিকে বিরোধী দল বিএনপি ও তার জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
উপসংহার
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) এবং শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামল (১৯৯৬-২০০১) উভয়ই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে স্বতন্ত্র গুরুত্ব বহন করে। খালেদা জিয়ার সরকার স্বৈরাচার পরবর্তী সময়ে সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং অর্থনৈতিক উদারীকরণের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। বিশেষ করে, নারী শিক্ষার প্রসারে তাঁর সরকারের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার সরকার প্রতিবেশী দেশের সাথে অমীমাংসিত મુદ્দার সমাধান, যেমন গঙ্গার পানি চুক্তি, এবং দেশের অভ্যন্তরীণ দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনে, যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, साहসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তাঁর শাসনামলে যমুনা সেতুর মতো বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
উভয় সরকারেরই সাফল্য এবং সীমাবদ্ধতা ছিল। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও প্রতিহিংসার সংস্কৃতি উভয় আমলেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে তাঁদের গৃহীত নীতি ও কার্যক্রম বাংলাদেশের পরবর্তী দশকগুলোর আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের পথ নির্মাণে সহায়ক হয়েছিল। এই দুই শাসনামলের তুলনামূলক মূল্যায়ন থেকে এটি স্পষ্ট যে, প্রতিকূলতার মধ্যেও উভয় নেতাই নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন।
কোনো পূর্ববর্তী পোস্ট নেই
The main challenge of democracy in Bangladesh is not the holding of elections, but the establishment of democratic institutions and culture. – এই উক্তিটির আলোকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূল প্রতিবন্ধকতাসমূহ (যেমন: রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) আলোচনা কর।
সম্পর্কিত পোস্ট
একই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী (বাকশাল) এবং দ্বাদশ সংশোধনী (সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন)- এই দুটি সংশোধনীর প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোর উপর এদের বিপরীতমুখী প্রভাব বিস্তারিতভাবে মূল্যায়ন কর।
বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ ও দ্বাদশ সংশোধনী দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন। একটি একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তন করে, অন্যটি সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। এই দুটি সংশোধনীর প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য এবং দেশের রাজনৈতিক কাঠামোর উপর তাদের সুদূরপ্রসারী ও বিপরীতধর্মী প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
ছয় দফা কর্মসূচির দফাগুলো উল্লেখপূর্বক বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি রচনায় এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য মূল্যায়ন কর।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ছয় দফা কর্মসূচি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এই কর্মসূচি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি রচনা করে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এটি ছিল এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ, যা বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে সুস্পষ্ট করে তোলে এবং স্বাধীনতার পথে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।