ভর্তি পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞানে কীভাবে বস হবেন: বইয়ের পাহাড় না ঘেঁটে যা পড়বেন এবং যেভাবে পড়বেন (একটি চূড়ান্ত স্মার্ট গাইড)

ভূমিকা: তথ্যের মহাসাগরে হাবুডুবু এবং একটি লাইফ জ্যাকেট

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির কথা ভাবলেই যে কয়েকটি বিষয় ছাত্রছাত্রীদের কপালে চিন্তার সবচেয়ে গভীর ভাঁজ ফেলে, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সাধারণ জ্ঞান বা General Knowledge (GK)। এর কারণটাও খুব যৌক্তিক। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বা হিসাববিজ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট এবং দৃশ্যমান সিলেবাস আছে, কিন্তু সাধারণ জ্ঞানের কোনো নির্দিষ্ট সিলেবাস নেই। এর পরিসর যেন আকাশের মতোই অসীম, যার এক প্রান্ত মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে শুরু হলে অন্য প্রান্ত হয়তো মঙ্গল গ্রহে নাসার নতুন রোভার দিয়ে শেষ হয়।

“কী পড়ব?”, “কী বাদ দেব?”, “এই বইটা ভালো নাকি ওইটা?”, “সাম্প্রতিক পড়ার জন্য কি প্রতিদিন পাঁচটা পত্রিকা পড়তে হবে?”—এই প্রশ্নগুলো ভাবতে ভাবতেই মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানে গিয়ে বাজারের মোটা মোটা সাধারণ জ্ঞানের বইগুলো দেখলেই যেন এক ধরনের জ্ঞান-জ্বর চলে আসে।

কিন্তু আমি যদি বলি, এই ভয়টা ভিত্তিহীন? আমি যদি বলি, ভর্তি পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞানে ভালো করার জন্য আপনাকে সবকিছু জানতে হবে না? সত্যিটা হলো, ভর্তি পরীক্ষার জিকে প্রশ্নগুলো আপাতদৃষ্টিতে অসীম মনে হলেও, এর একটি সুনির্দিষ্ট এবং প্রায় predictable প্যাটার্ন রয়েছে। পরীক্ষকরা কিছু পরীক্ষিত এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকেই প্রশ্ন করেন।

আপনার কাজ হলো একজন খনি শ্রমিকের মতো করে তথ্যের এই বিশাল পাহাড় থেকে সোনার খণ্ডগুলো খুঁজে বের করা, পুরো পাহাড়টা মাথায় তোলা নয়।

এই আর্টিকেলে আমরা তথ্যের এই মহাসাগর থেকে মুক্তো খুঁজে বের করার সেই গোপন কৌশল এবং একটি স্মার্ট, কার্যকর রোডম্যাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই গাইডটি অনুসরণ করলে আপনি কম সময়ে, কম পরিশ্রমে সাধারণ জ্ঞানে অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে যেতে পারবেন এবং এই অংশটিকে আপনার সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গায় পরিণত করতে পারবেন।

চলো, বইয়ের পাহাড় ডিঙিয়ে সাধারণ জ্ঞানে বস হওয়ার যাত্রা শুরু করি।

অধ্যায় ১: যুদ্ধক্ষেত্রকে জানুন—প্রশ্ন কোথা থেকে আসে এবং নম্বর বণ্টন কেমন থাকে?

যেকোনো যুদ্ধে নামার আগে যুদ্ধক্ষেত্র এবং শত্রুর শক্তি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।

  • প্রধান দুটি ভাগ:
    1. বাংলাদেশ বিষয়াবলী (Bangladesh Affairs): এটি আপনার প্রস্তুতির মেরুদণ্ড। মোট প্রশ্নের প্রায় ৬০-৭০% এখান থেকেই আসে। এখানে ভালো করা মানেই অর্ধেক যুদ্ধ জয়।
    2. আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী (International Affairs): এখান থেকে প্রায় ৩০-৪০% প্রশ্ন আসে। এই অংশটি বিশাল এবং পরিবর্তনশীল, তাই এখানে কৌশলগতভাবে এগোতে হবে।
  • অন্যান্য বিষয় (সাম্প্রতিক ফোকাস): এর বাইরেও ৫-১০% প্রশ্ন আসতে পারে সাম্প্রতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য, পরিবেশ এবং বিখ্যাত উদ্ধৃতি বা বই থেকে। এই অংশটি মূলত সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর উপর নির্ভরশীল।

অধ্যায় ২: বাংলাদেশ বিষয়াবলী—নিজের উঠোন আগে সামলান (সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন)

এই অংশে ভালো করা তুলনামূলকভাবে সহজ, কারণ এর তথ্যের উৎসগুলো নির্দিষ্ট এবং সহজে পাওয়া যায়। এখানে আপনাকে কিছু টপিক পড়তেই হবে, কোনো ছাড় নেই।

ক্যাটাগরি ‘A’ টপিক (এগুলো থেকে প্রশ্ন আসবেই):

  1. বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয় (আপনার প্রস্তুতির হৃৎপিণ্ড):
    • কী পড়বেন:
      • বঙ্গবন্ধুর জীবন: জন্ম, মৃত্যু, পরিবার, বিভিন্ন উপাধি (কখন, কে দিয়েছেন), উল্লেখযোগ্য ভাষণ (বিশেষ করে ৭ই মার্চের ভাষণ এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ভাষণ), তাঁর লেখা বই (‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’)।
      • ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ: ১৯৪৭ এর দেশভাগ, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‘৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা (কখন, কোথায় উত্থাপিত হয় এবং প্রতিটি দফা), আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা (আসামি সংখ্যা, প্রধান আসামি), ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০ এর নির্বাচন (আসন সংখ্যা, ফলাফল)।
      • মুক্তিযুদ্ধের খুঁটিনাটি: স্বাধীনতার ঘোষণা (কে, কখন, কোথা থেকে দিয়েছেন), মুজিবনগর সরকার (গঠন, সদস্য, দপ্তর, শপথ গ্রহণের তারিখ ও স্থান), মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর ও তাদের সেক্টর কমান্ডার, প্রধান প্রধান গেরিলা বাহিনী, বীরশ্রেষ্ঠদের নাম, তাদের পদবি, কর্মস্থল ও সেক্টর, আত্মসমর্পণের দলিল (কবে, কোথায়, কে কে স্বাক্ষর করেন), বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম দেশসমূহ।
      • মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিল্প-সাহিত্য: গুরুত্বপূর্ণ বই (যেমন: ‘একাত্তরের দিনগুলি’), চলচ্চিত্র (‘ওরা ১১ জন’, ‘আগুনের পরশমণি’), ভাস্কর্য (‘অপরাজেয় বাংলা’, ‘সংশপ্তক’ – কোথায় অবস্থিত এবং ভাস্কর কে)।
    • স্মার্ট কৌশল: এই পুরো টপিকটি একটি টাইমলাইন বা গল্পের মতো করে পড়ুন, সাল-তারিখ অনুযায়ী সাজিয়ে। একটি বড় কাগজে ফ্লোচার্ট তৈরি করে পড়ার টেবিলে লাগিয়ে রাখতে পারেন।
  2. বাংলাদেশের সংবিধান (The Holy Book of the Nation):
    • কী পড়বেন: সংবিধান রচনার ইতিহাস (কমিটির সদস্য, প্রধান, সময়কাল), মোট ভাগ, অনুচ্ছেদ ও তফসিল। সবগুলো অনুচ্ছেদ মুখস্থ করার বোকামি করবেন না। শুধু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলো (যেমন: ২-প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা, ৭-সংবিধানের প্রাধান্য, ১১-গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, ১৭-অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা, ২২-নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ, ২৭ থেকে ৪৭ পর্যন্ত মৌলিক অধিকারসমূহ, ৪৮-রাষ্ট্রপতি, ৫৫-মন্ত্রিসভা, ৬৪-অ্যাটর্নি জেনারেল, ৭৭-ন্যায়পাল, ৯৪-সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা, ১১৮-নির্বাচন কমিশন, ১৪১(ক)-জরুরি অবস্থা) সম্পর্কে ধারণা রাখুন।

ক্যাটাগরি ‘B’ টপিক (গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়শই আসে):

  1. বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সাম্প্রতিক অর্জন:
    • কী পড়বেন: পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো মেগা প্রজেক্টগুলোর খুঁটিনাটি তথ্য (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, স্প্যান সংখ্যা, অর্থায়নকারী সংস্থা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, উদ্বোধন)।
    • অর্থনৈতিক সমীক্ষা: সর্বশেষ বাজেট ও অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে জিডিপি, মাথাপিছু আয়, মূদ্রাস্ফীতি, রেমিট্যান্স এবং প্রধান রপ্তানি ও আমদানি পণ্য সম্পর্কে ধারণা নিন।
  2. বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, পরিবেশ ও সম্পদ:
    • কী পড়বেন: বাংলাদেশের সীমানা (কোন জেলার সাথে ভারতের কোন রাজ্য), প্রধান নদ-নদী (বিশেষ করে উৎপত্তি ও পতিত স্থল), পাহাড়-পর্বত (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ), সুন্দরবন (বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতি), হাওর, সমুদ্র সৈকত এবং বিভিন্ন ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলের পরিচিতি। প্রাকৃতিক সম্পদ (গ্যাসক্ষেত্র) এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও ধারণা রাখুন।
  3. প্রাচীন বাংলা ও সুলতানি আমলের ইতিহাস:
    • কী পড়বেন: পুণ্ড্রবর্ধন, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। পাল, সেন ও মৌর্য বংশের মতো গুরুত্বপূর্ণ শাসনকালের শ্রেষ্ঠ রাজা ও তাদের কীর্তি। সুলতানি আমল এবং বারো ভূঁইয়াদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা।

এই টপিকগুলো পড়ার জন্য কী বই ও রিসোর্স ব্যবহার করবেন?

  • বোর্ড বই (আপনার বাইবেল): নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ এবং ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বই দুটি থেকে প্রায় ৫০-৬০% প্রশ্ন সরাসরি কমন পাওয়া যায়। এই দুটি বই সবার আগে শেষ করুন।
  • সহায়ক বই: বাজারের যেকোনো একটি ভালো মানের সাধারণ জ্ঞানের বই (যেমন: MP3, আজকের বিশ্ব, নতুন বিশ্ব) সহায়ক হিসেবে রাখুন। তবে বইয়ের সব তথ্য পড়তে যাবেন না, শুধু উপরের টপিকগুলো মিলিয়ে পড়ুন।
  • মানচিত্র: একটি বাংলাদেশের মানচিত্র কিনে পড়ার টেবিলের সামনে রাখুন। ভৌগোলিক বিষয়গুলো পড়ার সময় মানচিত্র দেখলে তা সহজে মনে থাকে।

অধ্যায় ৩: আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী—সারা বিশ্বের খবর, স্মার্টলি এবং কৌশলগতভাবে

এই অংশটি বিশাল এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই এখানে সবকিছু পড়তে যাওয়াটা সাগরে সাতার কাটার মতো, কূল পাওয়া কঠিন। আপনাকে কৌশলগতভাবে এগোতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষিত টপিক:

  1. আন্তর্জাতিক সংস্থা (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ):
    • কী পড়বেন: জাতিসংঘ (UN) ও এর প্রধান ৬টি অঙ্গসংগঠন (যেমন: নিরাপত্তা পরিষদ, সাধারণ পরিষদ), এবং বিশেষায়িত সংস্থা যেমন WHO, UNESCO, UNICEF। বিশ্বব্যাংক (WB), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF), বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)। সামরিক জোট যেমন ন্যাটো (NATO)। আঞ্চলিক সংস্থা যেমন সার্ক (SAARC), বিমসটেক (BIMSTEC), আসিয়ান (ASEAN), ইইউ (EU)। এদের প্রতিষ্ঠা সাল, সদর দপ্তর, বর্তমান প্রধান, সদস্য সংখ্যা এবং মূল কাজ সম্পর্কে একটি ছক তৈরি করে পড়ুন।
  2. বৈশ্বিক চুক্তি, সম্মেলন ও পুরস্কার:
    • কী পড়বেন: সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত আন্তর্জাতিক চুক্তি, জলবায়ু সম্মেলন (COP), এবং নোবেল পুরস্কার (বিশেষ করে শান্তি, সাহিত্য ও অর্থনীতিতে কারা এবং কেন পেলেন)। অস্কার পুরস্কার (সেরা চলচ্চিত্র ও পরিচালক) সম্পর্কেও ধারণা রাখুন।
  3. বিভিন্ন দেশের পরিচিতি এবং সাম্প্রতিক ঘটনা:
    • সব দেশের তথ্য না পড়ে, শুধু যেগুলো সংবাদে বেশি আসে (যেমন: যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, ইরান, উত্তর কোরিয়া)। বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত ভৌগোলিক উপনাম, বিখ্যাত প্রণালী, সীমান্ত রেখা, রাজধানী ও মুদ্রা সম্পর্কে জানুন।
  4. বিখ্যাত যুদ্ধ ও ঐতিহাসিক ঘটনা:
    • প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (কারণ, সময়কাল, অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তি), স্নায়ুযুদ্ধ, এবং সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মূল কারণ এবং বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা রাখুন।

অধ্যায় ৪: যেভাবে পড়লে মস্তিষ্কে স্থায়ী হবে—স্মার্ট স্টাডি হ্যাকস

সাধারণ জ্ঞান পড়ার আসল চ্যালেঞ্জ হলো পরীক্ষার হল পর্যন্ত তথ্য মনে রাখা। এর জন্য কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কৌশল অবলম্বন করুন।

  1. গল্প তৈরি করুন (Create a Story): বিচ্ছিন্ন তথ্য (যেমন: সাল, তারিখ) মনে রাখা কঠিন। তাই তথ্যগুলোকে একটি গল্পের মতো করে সাজিয়ে নিন। যেমন: ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ঘটনাগুলোকে একটি ধারাবাহিক গল্পের আকারে পড়ুন।
  2. নেমোনিক (Mnemonic) বা ছন্দের জাদু: কঠিন বা একগুচ্ছ তথ্য মনে রাখার জন্য মজার ছন্দ বা সংক্ষিপ্ত শব্দ তৈরি করুন। যেমন: নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলোর নাম মনে রাখার জন্য “FACER-U” (France, America, China, England, Russia-USA) ব্যবহার করা যায়। অথবা, বিমসটেক-এর সদস্য দেশগুলো মনে রাখার জন্য “MBBS-NIT” (Myanmar, Bangladesh, Bhutan, Sri Lanka – Nepal, India, Thailand)।
  3. মাইন্ড ম্যাপ ও ফ্লোচার্ট: একটি বড় কাগজে মূল টপিকটি (যেমন: মুক্তিযুদ্ধ) লিখে তার চারপাশে শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে সম্পর্কিত তথ্যগুলো (সেক্টর, বীরশ্রেষ্ঠ, মুজিবনগর সরকার) লিখে একটি মাইন্ড ম্যাপ তৈরি করুন। এটি রিভিশনের সময় পুরো বিষয়টি এক নজরে দেখতে সাহায্য করবে।
  4. অ্যাক্টিভ রিকল এবং কুইজ: পড়ার পর বই বন্ধ করে নিজে নিজে প্রশ্ন তৈরি করুন এবং তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। বন্ধুদের সাথে কুইজ খেলার মতো করে পড়ুন। এটি পড়াকে আনন্দদায়ক করবে এবং মনেও থাকবে বেশি।
  5. সংযুক্ত করে পড়ুন (Connect the Dots): একটি তথ্যের সাথে আরেকটি তথ্যকে সংযুক্ত করুন। যেমন: যখন আপনি ইউক্রেন নিয়ে পড়ছেন, তখন ন্যাটোর প্রসঙ্গটিও পড়ে ফেলুন। যখন পদ্মা সেতু নিয়ে পড়ছেন, তখন বিশ্বব্যাংকের প্রসঙ্গটিও জেনে নিন।

অধ্যায় ৫: সাম্প্রতিক তথ্যের জন্য কী করবেন? (আপ-টু-ডেট থাকার কৌশল)

সাধারণ জ্ঞানের একটি বড় অংশ আসে সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে। এর জন্য আপনাকে গোয়েন্দার মতো চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।

  • দৈনিক পত্রিকা (সবচেয়ে কার্যকর): প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো বাংলা পত্রিকার প্রথম পাতা, শেষ পাতা এবং আন্তর্জাতিক পাতায় চোখ বোলান। পুরো পত্রিকা পড়ার প্রয়োজন নেই। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো একটি আলাদা খাতায় নোট করে রাখুন।
  • মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: প্রতি মাসের শেষে বাজারে আসা যেকোনো একটি ভালো মানের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিন পড়ুন। এটি আপনার মাসিক তথ্যের একটি চমৎকার সংকলন হিসেবে কাজ করবে।
  • অনলাইন রিসোর্স: নির্ভরযোগ্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং শিক্ষামূলক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে নিয়মিত চোখ রাখুন।

উপসংহার: কম পড়ুন, কিন্তু যা পড়বেন তা থেকে প্রশ্ন আসবেই

সাধারণ জ্ঞানে ভালো করার মূলমন্ত্র হলো—“Know something about everything, and everything about something.” অর্থাৎ, অনেক বিষয়ে অল্প অল্প ধারণা রাখুন, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষিত বিষয়গুলো (যেমন: মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সংবিধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা) সম্পর্কে বিস্তারিত এবং নিখুঁতভাবে জানুন।

তথ্যের সমুদ্রে হারিয়ে না গিয়ে, এই গাইডে দেখানো পথ ধরে একটি ছক তৈরি করে এগিয়ে যান। একটি ভালো সাধারণ জ্ঞানের বই, নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই এবং নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস—এই তিনটি জিনিসই আপনাকে সাধারণ জ্ঞানে অন্যদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে দেবে এবং এই অংশটিকে আপনার সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গায় পরিণত করবে।

মনে রাখবেন, ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান অংশটিই পারে র‍্যাঙ্কিং-এ বিশাল পার্থক্য গড়ে দিতে। তাই ভয় না পেয়ে, কৌশল দিয়ে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে এই যুদ্ধটি জয় করুন।

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *