১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর।
ভূমিকা
ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং ১৯১১ সালে তার রদ একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। লর্ড কার্জন কর্তৃক গৃহীত বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত যেমন ব্যাপক রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, তেমনি এর রদ বা বাতিলকরণও উপমহাদেশের ভবিষ্যৎ গতিপথকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বঙ্গভঙ্গ করা হলেও এর পেছনে ব্রিটিশদের 'ভাগ করো ও শাসন করো' (Divide and Rule) নীতিই মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। বঙ্গভঙ্গের ফলে নবগঠিত 'পূর্ববঙ্গ ও আসাম' প্রদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তারা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। কিন্তু অন্যদিকে, বঙ্গভঙ্গকে 'বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ' হিসেবে আখ্যায়িত করে বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী নেতারা এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখেই ব্রিটিশ সরকার শেষ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়। এই ঘোষণার পেছনে বহুবিধ কারণ এবং এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী, যা হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল এবং ভারতীয় রাজনীতির নতুন মেরুকরণের সূচনা করেছিল।
বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ
১৯০৫ সালে গৃহীত বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ সরকারকে ১৯১১ সালে প্রত্যাহার করে নিতে হয়। এর পেছনে একক কোনো কারণ ছিল না, বরং একাধিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্মিলিত চাপের মুখে সরকার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছিল। নিম্নে বঙ্গভঙ্গ রদের প্রধান কারণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
১. তীব্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন
বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সংগঠিত এবং শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাংলার হিন্দু জাতীয়তাবাদী liderazgo। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, বিপিনচন্দ্র পাল, অরবিন্দ ঘোষের মতো নেতারা এই বিভাজনকে বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংস্কৃতির ওপর চরম আঘাত হিসেবে দেখেন। তাদের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গকে 'জাতীয় দুর্যোগ' আখ্যা দিয়ে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী, জমিদার, আইনজীবী এবং ব্যবসায়ীরা মনে করেছিলেন যে, এই বিভাজনের ফলে তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে। তাদের আশঙ্কা ছিল, পূর্ববঙ্গের নতুন প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ঢাকার উত্থান কলকাতার গুরুত্বকে ম্লান করে দেবে। এই আন্দোলন কেবল পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সমগ্র বাংলা এবং ভারতের অন্যান্য অংশেও এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল।
২. স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলন
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে কার্যকর কৌশল ছিল স্বদেশী আন্দোলন এবং বয়কট। ব্রিটিশ পণ্য, বিশেষ করে ম্যানচেস্টারের বস্ত্র ও লিভারপুলের লবণ বর্জন করার ডাক দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি দেশীয় শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়। এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্রিটিশ কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমে যায় এবং ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা সরকারের ওপর বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। স্বদেশী আন্দোলন শুধু একটি অর্থনৈতিক চাপই সৃষ্টি করেনি, বরং এটি ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিরোধ।
৩. সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিস্তার
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, সভা-সমাবেশের পাশাপাশি বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বিপ্লববাদেরও অনুপ্রবেশ ঘটে। অনুশীলন সমিতি এবং যুগান্তরের মতো গুপ্ত সংগঠনগুলো ব্রিটিশ কর্মকর্তা এবং তাদের অনুগতদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাতে শুরু করে। বাংলার গভর্নরকে হত্যার চেষ্টা, বোমা হামলা এবং রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে। এই চরমপন্থী কার্যকলাপ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটায় এবং ব্রিটিশ সরকারকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে।
৪. কংগ্রেসের ভূমিকা ও সর্বভারতীয় চাপ
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস শুরু থেকেই বঙ্গভঙ্গের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। কংগ্রেস নেতারা এটিকে ব্রিটিশদের 'ভাগ করো ও শাসন করো' নীতির একটি ঘৃণ্য প্রয়োগ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তারা মনে করতেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্যই এই বিভাজন করা হয়েছে। কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনগুলোতে বঙ্গভঙ্গ রদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং এর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনমত গঠনের চেষ্টা চালানো হয়। এই সর্বভারতীয় রাজনৈতিক চাপ ব্রিটিশ সরকারের ওপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল।
৫. ব্রিটিশ সরকারের নীতির পরিবর্তন
লর্ড কার্জনের পরবর্তী বড়লাট লর্ড মিন্টো এবং ভারত সচিব লর্ড মর্লি বুঝতে পারছিলেন যে, বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা ব্রিটিশ শাসনের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কারের মাধ্যমে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করলেও বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন তাতে শান্ত হয়নি। অবশেষে, নতুন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি একদিকে বঙ্গভঙ্গ রদ করে হিন্দুদের শান্ত করতে চেয়েছিলেন, অন্যদিকে মুসলিমদের সন্তুষ্ট রাখতে এবং বাংলার রাজনৈতিক গুরুত্ব কমাতে ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরের সুপারিশ করেন।
৬. রাজা পঞ্চম জর্জের ভারত সফর
১৯১১ সালে ব্রিটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জের ভারত সফরের একটি পরিকল্পনা করা হয়। ব্রিটিশ সরকার চেয়েছিল এই সফর যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। বঙ্গভঙ্গবিরোধী চলমান আন্দোলন এই সফরের জন্য একটি বড় হুমকি ছিল। তাই সফরের আগেই পরিস্থিতি শান্ত করার প্রয়োজন ছিল। এই প্রেক্ষাপটে, ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লির দরবারে সম্রাট পঞ্চম জর্জ স্বয়ং বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা দেন। এটি ছিল ব্রিটিশ সরকারের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা একদিকে রাজকীয় ঘোষণাকে ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যদিকে নিজেদের মুখ রক্ষার একটি প্রচেষ্টা ছিল।
বঙ্গভঙ্গ রদের ফলাফল
বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা বাংলার এবং সমগ্র ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। এর ফলাফল ছিল মিশ্র এবং সম্প্রদায়ভেদে এর প্রতিক্রিয়াও ছিল ভিন্ন। নিম্নে এর প্রধান ফলাফলগুলো আলোচনা করা হলো:
১. হিন্দু সম্প্রদায়ের বিজয় এবং জাতীয়তাবাদের উত্থান
বঙ্গভঙ্গ রদকে বাংলার হিন্দু সম্প্রদায় এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস তাদের আন্দোলনের একটি বড় বিজয় হিসেবে দেখে। এটি তাদের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাস তৈরি করে এবং প্রমাণ করে যে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা সম্ভব। এই ঘটনা ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। তবে, এই বিজয়ের ফলে হিন্দু জাতীয়তাবাদের যে উগ্র রূপ প্রকাশ পেয়েছিল, তা মুসলিমদের থেকে তাদের দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।
২. মুসলিম সম্প্রদায়ের হতাশা ও ব্রিটিশদের প্রতি আস্থার অবক্ষয়
পূর্ববঙ্গের মুসলিম সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গকে তাদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির একটি সুযোগ হিসেবে দেখেছিল। নতুন প্রদেশে ঢাকা রাজধানীর মর্যাদা পাওয়ায় এবং মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে তারা শিক্ষা, চাকরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নতির স্বপ্ন দেখেছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। তারা মনে করে, ব্রিটিশ সরকার হিন্দুদের চাপের মুখে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এই ঘটনা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মুসলিমদের আস্থা মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয় এবং তাদের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠন প্রয়োজন।
৩. হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতি
বঙ্গভঙ্গ এবং এর রদ হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটায়। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যে স্বদেশী আন্দোলন গড়ে ওঠে, তার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই হিন্দু ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করা হয়, যা মুসলিমদের এই আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অন্যদিকে, বঙ্গভঙ্গ রদের পর মুসলিমরা কংগ্রেসকে একটি হিন্দু-স্বার্থরক্ষাকারী সংগঠন হিসেবে দেখতে শুরু করে। এই পারস্পরিক অবিশ্বাস ও তিক্ততা পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম দেয় এবং ভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে স্থায়ী করে তোলে।
৪. মুসলিম লীগের রাজনীতির গুরুত্ব বৃদ্ধি
বঙ্গভঙ্গের ফলেই ১৯০৬ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠিত হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা। বঙ্গভঙ্গ রদের ঘটনা মুসলিম লীগ নেতাদের এই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে যে, কংগ্রেসের অধীনে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে না। ফলে, মুসলিম লীগ একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে মনোনিবেশ করে। বঙ্গভঙ্গ রদ কার্যত মুসলিম লীগের উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছিল।
৫. রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তর
বঙ্গভঙ্গ রদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ফলাফলগুলোর একটি ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর। এর পেছনে ব্রিটিশদের একাধিক উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, কলকাতাকেন্দ্রিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রাজনৈতিক গুরুত্ব হ্রাস করা। দ্বিতীয়ত, দিল্লির ঐতিহাসিক গুরুত্বকে কাজে লাগিয়ে মুসলিমদের সন্তুষ্ট করা, কারণ দিল্লি বহু শতাব্দী ধরে মুসলিম শাসনের কেন্দ্র ছিল। রাজধানী স্থানান্তরের ফলে কলকাতা তার পূর্বের রাজনৈতিক মর্যাদা হারায়, যা বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
৬. বাংলা প্রদেশের পুনর্গঠন
বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও বাংলাকে ১৯০৫ সালের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। ভাষাতাত্ত্বিক ভিত্তিতে বাংলাকে পুনর্গঠন করা হয়। বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলগুলো নিয়ে নতুন বাংলা প্রদেশ গঠিত হয় এবং বিহার ও উড়িষ্যাকে একটি পৃথক প্রদেশ হিসেবে গঠন করা হয়। আসামকেও পূর্বের মতো চিফ কমিশনারের অধীনে একটি পৃথক প্রদেশ করা হয়। এর ফলে বাংলা প্রদেশ আয়তনে ছোট হয়ে আসে, কিন্তু বাঙালিরা তাদের নিজেদের প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পায়।
উপসংহার
১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের সিদ্ধান্তটি ছিল ব্রিটিশ সরকারের জন্য একটি রাজনৈতিক পরাজয় এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্য একটি বড় বিজয়। তীব্র গণআন্দোলন, স্বদেশী ও বয়কট কর্মসূচির অর্থনৈতিক চাপ এবং সশস্ত্র বিপ্লববাদের মুখে ব্রিটিশ সরকার তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। তবে এই রদের ফলাফল ছিল অত্যন্ত জটিল ও সুদূরপ্রসারী। এটি একদিকে যেমন ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করেছিল, তেমনই অন্যদিকে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন এক গভীর বিভাজনের সৃষ্টি করেছিল যা আর কখনো পুরোপুরি মোছেনি। মুসলিমদের মনে ব্রিটিশদের প্রতি অবিশ্বাস এবং কংগ্রেসের প্রতি সন্দেহ তৈরি হয়, যা মুসলিম লীগের মতো পৃথক রাজনৈতিক সংগঠনের উত্থানকে অনিবার্য করে তোলে। পরিশেষে, বঙ্গভঙ্গ রদ এবং এর আনুষঙ্গিক ঘটনাবলি, যেমন রাজধানী স্থানান্তর, ভারতীয় উপমহাদেশের ভবিষ্যৎ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মঞ্চ প্রস্তুত করে দিয়েছিল, যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের মধ্য দিয়ে।
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের কারণ, প্রকৃতি ও গুরুত্ব আলোচনা কর।
কোনো পরবর্তী পোস্ট নেই
সম্পর্কিত পোস্ট
একই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট
উপমহাদেশের মুসলিম রাজনীতির বিকাশ আলোচনা কর।
ব্রিটিশ ভারতে উপমহাদেশের মুসলিম রাজনীতির বিকাশ একটি ঐতিহাসিক এবং জটিল প্রক্রিয়া। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ পর্যন্ত এর বিবর্তন ঘটে। এই সময়ের মধ্যে মুসলিমদের রাজনৈতিক চেতনা, স্বাতন্ত্র্যবোধ এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রাম বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগঠনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। স্যার সৈয়দ আহমদ খানের সংস্কার আন্দোলন, কংগ্রেসের প্রতি মুসলিমদের সংশয়, বঙ্গভঙ্গ এবং মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা এই ধারার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। লক্ষ্ণৌ চুক্তি, খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মতো ঘটনাগুলো হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সম্ভাবনা তৈরি করলেও নেহেরু রিপোর্ট এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ মুসলিমদের জন্য পৃথক রাজনৈতিক পথ অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করে। আল্লামা ইকবালের দার্শনিক ভাবনা, জিন্নাহর চৌদ্দ দফা এবং লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে, যা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। এই দীর্ঘ পথচলা উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রকে স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করে দেয়।
খিলাফত আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা কর।
খিলাফত আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ ভারতে মুসলিমদের দ্বারা পরিচালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয় এবং খলিফার মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। এর প্রধান কারণগুলো ছিল ধর্মীয় অনুভূতি, ব্রিটিশদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা। এই আন্দোলন হিন্দু-মুসলিম ঐক্য জোরদার করে এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন মাত্রা যোগ করে। এর ফলে মুসলিম সমাজে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শক্তিশালী হয়।