The journey of the Bangladeshi Constitution is a journey of constant amendments reflecting the political turmoil of the nation. – এই উক্তিটির আলোকে বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিবর্তনের একটি সমালোচনামূলক পর্যালোচনা কর।
ভূমিকা
"The journey of the Bangladeshi Constitution is a journey of constant amendments reflecting the political turmoil of the nation" – এই উক্তিটি বাংলাদেশের সাংবিধানিক যাত্রার এক নির্মোহ এবং বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, যা ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়, তা বাঙালি জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চারটি মূল স্তম্ভ—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর ভিত্তি করে এই সংবিধান প্রণীত হয়েছিল। কিন্তু যাত্রার শুরু থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথচলা ছিল অত্যন্ত বন্ধুর। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক অভ্যুত্থান, ক্ষমতার সংঘাত এবং আদর্শিক মতপার্থক্য বারবার সংবিধানের দেহে ক্ষতচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
ফলে, গত পাঁচ দশকে সংবিধানকে বহুবার সংশোধনীর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, যার সংখ্যা বর্তমানে ১৭টি। এই সংশোধনীগুলোর বেশিরভাগই কোনো স্বাভাবিক বা গণতান্ত্রিক চাহিদা থেকে উদ্ভূত হয়নি, বরং এগুলো ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা বা ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাকে সংহত করার একটি হাতিয়ার। প্রতিটি বড় সংশোধনীই দেশের এক একটি রাজনৈতিক সংকটকালীন পরিস্থিতির প্রতিফলন। এ কারণে বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিবর্তনকে দেশটির রাজনৈতিক উত্থান-পতনের ইতিহাস থেকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
এই প্রেক্ষাপটে, উক্তিটির আলোকে বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিবর্তনের একটি সমালোচনামূলক পর্যালোচনা অত্যন্ত যৌক্তিক। এখানে সংবিধানের মূল চেতনা থেকে বিচ্যুতি, বিভিন্ন সংশোধনীর পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং তার সুদূরপ্রসারী ফলাফলগুলো ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করা হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের পটভূমি এবং মূলনীতি
১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর, একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান প্রণয়ন ছিল অত্যন্ত জরুরি। এই লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধানের খসড়া তৈরি করে, যা ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
মূল সংবিধানের চারটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ছিল:
১. জাতীয়তাবাদ: ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। তাই সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
২. সমাজতন্ত্র: এর লক্ষ্য ছিল একটি শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে অর্থনৈতিক সমতা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হবে।
৩. গণতন্ত্র: রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা ছিল গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য।
৪. ধর্মনিরপেক্ষতা: ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার মূল চেতনা।
এই চারটি মূলনীতি ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন এবং একটি আধুনিক, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্ন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাজনৈতিক বাস্তবতার কঠিন আঘাতে জর্জরিত হয়।
রাজনৈতিক সংকট ও সাংবিধানিক সংশোধনী: একটি পর্যায়ক্রমিক বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিবর্তনকে কয়েকটি পর্বে ভাগ করে বিশ্লেষণ করলে রাজনৈতিক অস্থিরতার সাথে এর সম্পর্কটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রথম পর্যায় (১৯৭২-১৯৭৫): প্রাথমিক সংকট ও আদর্শিক বিচ্যুতি
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান ছিল। এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলার নামে সংবিধানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়, যা এর গণতান্ত্রিক চরিত্রকে সংকুচিত করে।
১. দ্বিতীয় সংশোধনী (১৯৭৩): এই সংশোধনীর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ বা বিশৃঙ্খলা দমনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধান যুক্ত করা হয়। এর ফলে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার স্থগিত করার ক্ষমতা লাভ করে সরকার, যা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী ছিল।
২. চতুর্থ সংশোধনী (১৯৭৫): এটি ছিল বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) নামে একটি মাত্র জাতীয় দল গঠন করা হয়। এই পরিবর্তনটি মাত্র ১১ মিনিটের সংসদীয় কার্যক্রমে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই পাস হয়, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে। এটি ছিল দেশের প্রথম বড় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, যা সংবিধানের মূল কাঠামোকে আঘাত করে।
দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৭৫-১৯৯০): সামরিক শাসন ও সাংবিধানিক অবক্ষয়
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অন্ধকার অধ্যায়ের সূচনা করে। এরপর দেশ দীর্ঘ ১৫ বছর সামরিক ও আধা-সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। এই সময়ে সংবিধানকে ক্ষমতাসীন সামরিক শাসকদের ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
১. পঞ্চম সংশোধনী (১৯৭৯): এই সংশোধনীটি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সকল সামরিক আইন, ঘোষণা ও কর্মকাণ্ডকে বৈধতা প্রদান করে। এর মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনায় "বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম" যুক্ত করা হয় এবং ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে "সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস" স্থাপন করা হয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে "বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ" দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। এই সংশোধনী সংবিধানের মূল চারটি স্তম্ভের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে কার্যত বাতিল করে দেয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে উচ্চ আদালত এই সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন।
২. সপ্তম সংশোধনী (১৯৮৬): ১৯৮২ সালে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থান এবং তার শাসনামলের সকল কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এই সংশোধনী আনা হয়। পঞ্চম সংশোধনীর মতোই এটিও ছিল ক্ষমতা দখলকে সাংবিধানিক বৈধতা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা।
৩. অষ্টম সংশোধনী (১৯৮৮): এই সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। যদিও অন্যান্য ধর্মের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার কথা বলা হয়, কিন্তু রাষ্ট্রধর্মের অন্তর্ভুক্তি একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দেয়, যা মূলনীতির পরিপন্থী।
এই পর্বের সংশোধনীগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পর সামরিক শাসকেরা নিজেদের কর্মকাণ্ডকে বৈধ করতে এবং নিজেদের আদর্শিক অবস্থানকে প্রতিষ্ঠা করতে সংবিধানকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করেছেন।
তৃতীয় পর্যায় (১৯৯০-২০০৮): গণতান্ত্রিক প্রত্যাবর্তন ও নতুন সংকট
১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নতুন যাত্রা শুরু হয়। এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সংঘাত নতুন ধরনের সাংবিধানিক সংকট তৈরি করে।
১. দ্বাদশ সংশোধনী (১৯৯১): ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর সকল প্রধান রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে এই সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে পুনরায় সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এটি ছিল রাজনৈতিক ঐকমত্যের একটি বিরল উদাহরণ এবং গণতান্ত্রিক ধারায় প্রত্যাবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
২. ত্রয়োদশ সংশোধনী (১৯৯৬): তৎকালীন বিরোধী দলগুলোর তীব্র আন্দোলনের মুখে এবং নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই সংশোধনী আনা হয়। এর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়, যা নির্বাচনকালীন সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করত। এটি কোনো আদর্শিক পরিবর্তন না হলেও, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম অবিশ্বাস ও সংঘাতের একটি সাংবিধানিক সমাধান ছিল। এই ব্যবস্থাটি কয়েকটি নির্বাচনে সফলভাবে কাজ করলেও পরবর্তীতে এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং নতুন রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দেয়।
চতুর্থ পর্যায় (২০০৯-বর্তমান): বিচার বিভাগীয় রায় ও বিতর্কিত পরিবর্তন
এই পর্বে বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিবর্তন অনেকাংশে বিচার বিভাগের রায়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। তবে কিছু সংশোধনী নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক ও বিভাজন তৈরি করেছে।
১. পঞ্চদশ সংশোধনী (২০১১): উচ্চ আদালতের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে, যা পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল, এই সংশোধনী আনা হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানের চারটি মূলনীতি (জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা) পুনঃস্থাপন করা হয়। তবে "বিসমিল্লাহ" এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অক্ষুণ্ণ রাখা হয়, যা একটি সুস্পষ্ট সাংবিধানিক স্ববিরোধিতা তৈরি করে। এই সংশোধনীর সবচেয়ে বিতর্কিত দিকটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত তীব্রতর হয় এবং পরবর্তী নির্বাচনগুলো নিয়ে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
২. ষোড়শ সংশোধনী (২০১৪): এই সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে—এই যুক্তিতে ব্যাপক সমালোচিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই সংশোধনীকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী হিসেবে ঘোষণা করে বাতিল করে দেন, যা নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে একটি টানাপোড়েনের সৃষ্টি করে।
সাংবিধানিক বিবর্তনের সমালোচনামূলক পর্যালোচনা
উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, বাংলাদেশের সংবিধানের যাত্রা দেশটির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর সমালোচনামূলক দিকগুলো হলো:
-
গণতান্ত্রিক চেতনার অবক্ষয়: চতুর্থ, পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর মতো পরিবর্তনগুলো সরাসরি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে। একদলীয় শাসন প্রবর্তন এবং সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার মাধ্যমে সংবিধানকে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে।
-
রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার: সংবিধানকে প্রায়শই ক্ষমতাসীন দল বা গোষ্ঠী তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে বা প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং বিলুপ্তি—উভয়ই ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতার ফসল, কোনো টেকসই সাংবিধানিক দর্শন নয়।
-
মৌলিক নীতির সাথে আপস: পঞ্চম ও অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার মতো একটি মৌলিক নীতিকে পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হলেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার মাধ্যমে একটি স্ববিরোধিতামূলক অবস্থান তৈরি করা হয়েছে, যা সংবিধানের আদর্শিক ভিত্তিকে দুর্বল করেছে।
-
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা: বারবার সংবিধান সংশোধন এবং এর মূল চেতনা থেকে সরে আসার প্রবণতা দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (যেমন: সংসদ, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ) দুর্বল করে দিয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে বিচার ও আইন বিভাগের দ্বন্দ্ব এর অন্যতম উদাহরণ।
উপসংহার
বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিবর্তন কোনো মসৃণ পথে অগ্রসর হয়নি। এটি বারবার রাজনৈতিক সংকট, ক্ষমতা দখল এবং আদর্শিক লড়াইয়ের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধান যে প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিল, তা বিভিন্ন সংশোধনীর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। প্রতিটি সংশোধনীই তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি জীবন্ত প্রমাণ।
চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসন, পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে সামরিক শাসনের বৈধতা, অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্মের প্রবর্তন, ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তার বিলুপ্তি—এই সবই প্রমাণ করে যে, সংবিধান জনগণের প্রয়োজন বা সময়ের দাবি মেটানোর চেয়ে রাজনৈতিক সংকট নিরসন বা ক্ষমতা সংহত করার কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।
সুতরাং, "The journey of the Bangladeshi Constitution is a journey of constant amendments reflecting the political turmoil of the nation" – এই উক্তিটি বাংলাদেশের গত পাঁচ দশকের সাংবিধানিক যাত্রার একটি সারসংক্ষেপ। এই সংবিধানের টিকে থাকা এবং এর বিবর্তন মূলত দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি দর্পণ, যা গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা এবং আইনের শাসনের জন্য জাতির নিরন্তর সংগ্রামকে প্রতিফলিত করে।
বাংলাদেশের দলীয় ব্যবস্থার প্রকৃতি, বিকাশ এবং বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর। দেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা অর্জনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা ও নেতৃত্বের ভূমিকার একটি সমালোচনামূলক পর্যালোচনা কর।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধী দলের ভূমিকা মূল্যায়ন কর। তারা কি সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পেরেছে নাকি কেবল সরকার পতনের আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ থেকেছে? উদাহরণসহ বিশ্লেষণ কর।
সম্পর্কিত পোস্ট
একই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) এবং শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) একটি তুলনামূলক নীতি ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন কর।
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) ও শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) নীতি ও কার্যক্রমের তুলনামূলক মূল্যায়ন। এই নিবন্ধে অর্থনৈতিক সংস্কার, বৈদেশিক নীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
The main challenge of democracy in Bangladesh is not the holding of elections, but the establishment of democratic institutions and culture. – এই উক্তিটির আলোকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূল প্রতিবন্ধকতাসমূহ (যেমন: রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) আলোচনা কর।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব, এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কীভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করছে তা এই লেখায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।