Skip to main content

সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম সংশোধনীসমূহকে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য আলোচনা কর এটি কীভাবে সংবিধানের প্রাধান্য ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠা করেছে?

মেফতাহুল তম্মীএকাডেমিক গবেষক ও লেখক

ভূমিকা

বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম এবং অষ্টম (আংশিক) সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য বহন করে। এই ঐতিহাসিক রায়গুলো নিছক কোনো আইনি সিদ্ধান্ত ছিল না, বরং এগুলো ছিল দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পুনরুজ্জীবন এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।

মূলত, এই সংশোধনীগুলো অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকদের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার অপপ্রয়াস ছিল। সুপ্রিম কোর্ট এই সংশোধনীগুলোকে অবৈধ ঘোষণার মাধ্যমে কয়েকটি মৌলিক নীতি প্রতিষ্ঠা করেছে: এক, অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখল এবং শাসনকার্য পরিচালনা অবৈধ; দুই, সংসদ সংবিধান সংশোধন করতে পারলেও এর মৌলিক কাঠামো (basic structure) পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না; এবং তিন, সংবিধানই দেশের সর্বোচ্চ আইন এবং দেশের সকল প্রতিষ্ঠান সংবিধানের অধীন।

এই সিদ্ধান্তগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ তার স্বাধীনতা ও অভিভাবকত্বের ভূমিকা সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি সংবিধানের প্রাধান্যকে সমুন্নত রেখেছে এবং ভবিষ্যত অগণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।

সংশোধনীসমূহ অবৈধ ঘোষণার প্রেক্ষাপট

পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম সংশোধনীর প্রেক্ষাপট এবং সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক সেগুলো অবৈধ ঘোষণার কারণগুলো ভিন্ন ভিন্ন হলেও এদের মধ্যে একটি সাধারণ যোগসূত্র ছিল – যা হলো অসাংবিধানিক শাসনকে সাংবিধানিক বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে আঘাত।

১. পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার প্রেক্ষাপট

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ই এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন বলবৎ ছিল। এই সময়ে খন্দকার মোশতাক আহমেদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এবং পরবর্তীতে জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্তৃক জারিকৃত সকল সামরিক আইন, আদেশ ও কর্মকাণ্ডকে সাংবিধানিক বৈধতা দেওয়ার জন্য ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রসহ চারটি মূলনীতি পরিবর্তন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের রায়: বাংলাদেশ ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড বনাম বাংলাদেশ সরকার মামলায়, যা "মুন সিনেমা হল" মামলা নামে পরিচিত, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০০৫ সালে পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে আপিল বিভাগ এই রায় বহাল রাখে।

রায়ের মূল ভিত্তি:

  • অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখল: আদালত स्पष्टভাবে ঘোষণা করে যে, সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা দখল সংবিধানের লঙ্ঘন এবং একটি অবৈধ عمل।
  • মৌলিক কাঠামো তত্ত্ব: আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো, যেমন—রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি পরিবর্তন করা যায় না।
  • সংসদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা: যে সংসদ সামরিক শাসনের অধীনে গঠিত হয়েছিল, তার পক্ষে পূর্ববর্তী সকল অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার। সংসদ সংবিধানের অভিভাবক, ধ্বংসকারী নয়।

এই রায়ের মাধ্যমে পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক শাসনের সকল কর্মকাণ্ড তার সাংবিধানিক ভিত্তি হারায় এবং ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের চরিত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।

২. সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার প্রেক্ষাপট

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং দেশে সামরিক শাসন জারি করেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তার শাসনামলের সকল সামরিক আইন, আদেশ ও কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ১৯৮৬ সালে সপ্তম সংশোধনী পাস করা হয়। এটিও পঞ্চম সংশোধনীর মতোই একটি "ইনডেমনিটি" বা দায়মুক্তির বিধান ছিল।

সুপ্রিম কোর্টের রায়: পঞ্চম সংশোধনীর মামলার রায়ের পথ অনুসরণ করে, ২০১০ সালে হাইকোর্ট বিভাগ এবং পরবর্তীতে আপিল বিভাগ সপ্তম সংশোধনীকেও অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করে।

রায়ের মূল ভিত্তি:

  • ক্ষমতা দখলের অবৈধতা: আদালত পুনরায় উল্লেখ করে যে, সংবিধানবহির্ভূত পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল একটি দণ্ডনীয় অপরাধ এবং অবৈধ।
  • দায়মুক্তি আইনের অসারতা: কোনো সংসদই পরবর্তীকালে আইন পাস করে পূর্ববর্তী অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সামরিক শাসনকে বৈধতা দিতে পারে না। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থী।
  • সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা: এই রায়ের মাধ্যমে আদালত সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর জোর দেয় এবং সামরিক হস্তক্ষেপের পথ রুদ্ধ করার বার্তা দেয়।

৩. অষ্টম সংশোধনী (আংশিক) অবৈধ ঘোষণার প্রেক্ষাপট

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ১৯৮৮ সালে জেনারেল এরশাদের শাসনামলে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী আনা হয়। এর মাধ্যমে দুটি প্রধান পরিবর্তন আনা হয়: (ক) ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়, এবং (খ) ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বিভাগের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করে বিচারব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের রায়: আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বনাম বাংলাদেশ মামলায়, যা "অষ্টম সংশোধনী মামলা" নামে বিখ্যাত, ১৯৮৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই সংশোধনীর শুধুমাত্র হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ সংক্রান্ত অংশটিকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলে রায় দেয়।

রায়ের মূল ভিত্তি:

  • মৌলিক কাঠামো তত্ত্বের প্রয়োগ: এই মামলাতেই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো "সংবিধানের মৌলিক কাঠামো তত্ত্ব" (Basic Structure Doctrine) জোরালোভাবে প্রয়োগ করা হয়। আদালত রায় দেয় যে, সংসদের সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা থাকলেও তা অসীম নয়। সংসদ সংবিধানের এমন কোনো মৌলিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে পারে না যা এর পরিচিতি ও কাঠামোকে ধ্বংস করে।
  • বিচার বিভাগের অখণ্ডতা: আদালত মনে করে, বাংলাদেশের সংবিধানে একটি অখণ্ড ও এককেন্দ্রিক বিচারব্যবস্থার কাঠামো রয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন বিচার বিভাগের এই অখণ্ড সত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা সংবিধানের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য।

এই রায়টি বিচারিক সক্রিয়তার এক অনন্য উদাহরণ এবং এটি প্রতিষ্ঠা করে যে, সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট সংসদের সংবিধান সংশোধনী ক্ষমতাকেও পর্যালোচনা করতে পারে।

অবৈধ ঘোষণার সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য

এই তিনটি সংশোধনী বাতিলের রায় বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গভীর এবং ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

১. অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখলকে নিরুৎসাহিতকরণ

এই রায়গুলোর সবচেয়ে বড় তাৎপর্য হলো, এগুলো অসাংবিধানিক পন্থায় সামরিক বা বেসামরিক যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টাকে অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক বাধা তৈরি হয়েছে।

২. ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম

পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিলের ফলে সামরিক শাসনামলে সংবিধানে আনা পরিবর্তনগুলো, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সংক্রান্ত পরিবর্তনগুলো, তাদের আইনি ভিত্তি হারায়। এর ফলে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল নীতিগুলো (যেমন—ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র) অনেকাংশে পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হয়।

৩. ‘মৌলিক কাঠামো তত্ত্ব’ (Basic Structure Doctrine) প্রতিষ্ঠা

অষ্টম সংশোধনী মামলার মাধ্যমে বাংলাদেশে ‘মৌলিক কাঠামো তত্ত্ব’ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। এই তত্ত্ব অনুসারে, সংবিধানের প্রস্তাবনা, গণতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং মৌলিক অধিকারের মতো বিষয়গুলো সংবিধানের মৌলিক কাঠামো, যা সংসদ কোনোভাবেই সংশোধন করতে পারে না। এটি সংসদীয় সার্বভৌমত্বের ওপর একটি সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা আরোপ করে।

৪. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা

এই রায়গুলো আইনের শাসনকে সমুন্নত করেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়—এমনকি সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সামরিক শাসক বা নির্বাচিত সংসদও নয়। সংবিধানের লঙ্ঘন করে কোনো কাজ করলে তা দেরিতে হলেও বিচারিক পর্যালোচনার সম্মুখীন হবে, এই বার্তাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সংবিধানের প্রাধান্য ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা

এই ঐতিহাসিক রায়গুলো দুটি মূল স্তম্ভকে শক্তিশালী করেছে: সংবিধানের সর্বোচ্চতা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।

১. সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা

বাংলাদেশের সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।"

  • বাস্তব প্রয়োগ: পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়েছে। আদালত দেখিয়েছে যে, "আইন" শুধু সাধারণ আইন নয়, সংবিধানের সংশোধনীও এর অন্তর্ভুক্ত। যদি কোনো সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে সেটিও বাতিলযোগ্য।
  • সংসদের ক্ষমতার উৎস: এই রায়গুলো প্রতিষ্ঠা করেছে যে, সংসদ সার্বভৌম হলেও এর ক্ষমতা সংবিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ। সংসদ সংবিধানের সৃষ্টি, স্রষ্টা নয়। তাই এটি এমন কোনো আইন বা সংশোধনী পাশ করতে পারে না যা সংবিধানের মূল ভিত্তিকেই ধ্বংস করে দেয়।

এভাবে, সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানকে সকল নির্বাহী ও আইন প্রণয়নকারী ক্ষমতার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছে, যা সংবিধানের প্রাধান্যকে তর্কাতীতভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

২. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বিকাশ

এই রায়গুলো স্বাধীন বিচার বিভাগের গুরুত্ব ও ক্ষমতাকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে।

  • বিচারিক পর্যালোচনার ক্ষমতা (Power of Judicial Review): সুপ্রিম কোর্ট তার বিচারিক পর্যালোচনার ক্ষমতা প্রয়োগ করে আইন বিভাগ কর্তৃক পাসকৃত সংবিধান সংশোধনী বাতিল করার মতো দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি বিচার বিভাগকে শাসন ও আইন বিভাগের কর্মকাণ্ডের উপর সাংবিধানিক নজরদারির অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
  • সংবিধানের অভিভাবক: এই রায়গুলোর মাধ্যমে বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক ও চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকারক হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। যখনই শাসন বিভাগ বা আইন বিভাগ তাদের ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করেছে, বিচার বিভাগ সংবিধানকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে।
  • ক্ষমতার ভারসাম্য: রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ—শাসন, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় এই রায়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি বিচার বিভাগকে অন্য দুটি বিভাগের সমকক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা রোধে একটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে।

উপসংহার

পরিশেষে, সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম (আংশিক) সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়গুলো নিছক কয়েকটি আইন বাতিল করার ঘটনা নয়। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণকারী এক সাংবিধানিক বিপ্লব। এই রায়গুলো অগণতান্ত্রিক সামরিক শাসনের কবর রচনা করেছে এবং গণতন্ত্রের যাত্রাকে সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত করেছে।

এই সিদ্ধান্তগুলোর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে যে, সংবিধানই দেশের সর্বোচ্চ আইন এবং এর মৌলিক কাঠামো অপরিবর্তনীয়। একই সাথে, বিচার বিভাগ যে সংবিধানের রক্ষক হিসেবে স্বাধীন ও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম, তাও প্রমাণিত হয়েছে। এই রায়গুলো বাংলাদেশের সকল নাগরিক, রাজনৈতিক দল এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেয় যে, সাংবিধানিক শাসন ও আইনের প্রাধান্যই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

একই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট

খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) এবং শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) একটি তুলনামূলক নীতি ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন কর।

খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) ও শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) নীতি ও কার্যক্রমের তুলনামূলক মূল্যায়ন। এই নিবন্ধে অর্থনৈতিক সংস্কার, বৈদেশিক নীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

পড়ুন

The main challenge of democracy in Bangladesh is not the holding of elections, but the establishment of democratic institutions and culture. – এই উক্তিটির আলোকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূল প্রতিবন্ধকতাসমূহ (যেমন: রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) আলোচনা কর।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব, এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কীভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করছে তা এই লেখায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

পড়ুন