Skip to main content

বাংলাদেশের কর কাঠামোর বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

মেফতাহুল তম্মীএকাডেমিক গবেষক ও লেখক

ভূমিকা

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন এবং রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি সুসংগঠিত কর ব্যবস্থা অপরিহার্য। কর কাঠামো হলো সরকারের রাজস্ব আদায়ের মূল ভিত্তি, যার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ জনকল্যাণমূলক কাজ, অবকাঠামো নির্মাণ এবং দেশের সার্বিক পরিচালনায় ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি কার্যকর ও টেকসই কর কাঠামোর গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলাদেশের কর কাঠামো মূলত ব্রিটিশ শাসনামল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং সময়ের সাথে সাথে এর বিভিন্ন সংস্কার ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই কাঠামো দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: প্রত্যক্ষ কর (Direct Tax) এবং পরোক্ষ কর (Indirect Tax)। আয়কর, কর্পোরেট কর ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করের অন্তর্ভুক্ত, যেখানে মূল্য সংযোজন কর (VAT), আমদানি শুল্ক, আবগারি শুল্ক ইত্যাদি পরোক্ষ করের প্রধান উৎস। দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের প্রায় পুরোটাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কর্তৃক সংগৃহীত হয়।

বাংলাদেশের কর কাঠামোর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এর কার্যকারিতা এবং সীমাবদ্ধতা উভয়কেই নির্দেশ করে। পরোক্ষ করের ওপর अत्यधिक নির্ভরশীলতা, কর-জিডিপি'র নিম্ন অনুপাত, কর ফাঁকির প্রবণতা, এবং প্রশাসনিক জটিলতা এই কাঠামোর অন্যতম প্রধান দিক। বর্তমান আলোচনায় বাংলাদেশের কর কাঠামোর এই সকল বৈশিষ্ট্য বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হবে।

বাংলাদেশের কর কাঠামোর মূল ভিত্তি

বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা দুটি প্রধান স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে, যা দেশের মোট রাজস্ব আয়ের উৎস নির্ধারণ করে। এই দুটি ভিত্তি হলো প্রত্যক্ষ কর এবং পরোক্ষ কর। এই দুই প্রকার করের সংগ্রহ, ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োগের দায়িত্বে রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)

১. প্রত্যক্ষ কর (Direct Tax)

প্রত্যক্ষ কর বলতে সেই করকে বোঝায় যার করঘাত (Impact of Tax) ও করপাত (Incidence of Tax) একই ব্যক্তির উপর বর্তায়। অর্থাৎ, যে ব্যক্তির উপর কর আরোপ করা হয়, তাকেই সরাসরি এই কর পরিশোধ করতে হয় এবং তিনি এই করের বোঝা অন্যের উপর চাপাতে পারেন না। বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ করের প্রধান উৎসগুলো হলো:

  • আয়কর (Income Tax): ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের আয়ের উপর নির্দিষ্ট হারে এই কর আরোপ করা হয়। এটি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থার একটি উদাহরণ, যেখানে আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে করের হারও বৃদ্ধি পায়।
  • কর্পোরেট কর (Corporate Tax): বিভিন্ন কোম্পানি বা কর্পোরেশনের মুনাফার উপর এই কর ধার্য করা হয়।
  • সম্পদ কর (Wealth Tax), দান কর (Gift Tax) এবং ভূমি রাজস্ব (Land Revenue): এগুলিও প্রত্যক্ষ করের অন্তর্ভুক্ত, যদিও মোট রাজস্বে এদের অবদান তুলনামূলকভাবে কম।

বাংলাদেশে মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে, যা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।

২. পরোক্ষ কর (Indirect Tax)

পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে করঘাত ও করপাত ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির উপর পড়ে। সাধারণত পণ্য বা সেবার উৎপাদনকারী বা বিক্রেতার উপর এই কর আরোপ করা হলেও, এর বোঝা চূড়ান্তভাবে ভোক্তার উপর স্থানান্তরিত হয়। বাংলাদেশে পরোক্ষ কর রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস। এর অন্তর্ভুক্ত প্রধান করগুলো হলো:

  • মূল্য সংযোজন কর (Value Added Tax - VAT): পণ্য ও সেবার প্রতিটি স্তরে সংযোজিত মূল্যের উপর এই কর আরোপ করা হয়। এটি বাংলাদেশের কর কাঠামোর সবচেয়ে বড় অংশ।
  • আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক (Customs Duty): আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিশেষ করে পণ্য আমদানির উপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা হয়।
  • সম্পূরক শুল্ক (Supplementary Duty): সমাজের জন্য কম প্রয়োজনীয় বা বিলাসবহুল এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্যের উপর অতিরিক্ত হারে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
  • আবগারি শুল্ক (Excise Duty): দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের উপর এই শুল্ক ধার্য করা হয়।

বাংলাদেশের মোট কর রাজস্বের প্রায় ৬৫ শতাংশই পরোক্ষ কর থেকে সংগৃহীত হয়, যা এই ব্যবস্থার একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

বাংলাদেশের কর কাঠামোর প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ

বাংলাদেশের কর কাঠামোর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এর কার্যকারিতা, সীমাবদ্ধতা এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। নিম্নে এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো:

১. পরোক্ষ করের উপর অধিক নির্ভরশীলতা

বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে। মোট কর রাজস্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই সংগৃহীত হয় মূল্য সংযোজন কর (VAT), আমদানি শুল্ক এবং সম্পূরক শুল্কের মতো পরোক্ষ কর থেকে। এর প্রধান কারণ হলো পরোক্ষ কর সংগ্রহ করা তুলনামূলকভাবে সহজ এবং এর আওতা অনেক বিস্তৃত। তবে এর একটি বড় অসুবিধা হলো, এটি ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের উপর সমানভাবে প্রভাব ফেলে, যা একে একটি প্রতিগামী (Regressive) কর ব্যবস্থায় পরিণত করে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের উপর করের বোঝা বেশি পড়ে।

২. প্রত্যক্ষ করের সীমিত অবদান

উন্নত দেশগুলোতে প্রত্যক্ষ কর, বিশেষ করে আয়কর, রাজস্বের প্রধান উৎস হলেও বাংলাদেশে এর অবদান তুলনামূলকভাবে কম। মোট রাজস্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে প্রত্যক্ষ কর থেকে। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান, যেমন:

  • বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি: দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ এখনো আনুষ্ঠানিক খাতের বাইরে, ফলে তাদের আয় করের আওতায় আনা কঠিন।
  • কর ফাঁকির প্রবণতা: করদাতাদের একটি বড় অংশের মধ্যে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
  • সীমিত কর জাল: কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN) ধারীর সংখ্যা বাড়লেও রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা এখনো অনেক কম।

৩. নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাত

কর-জিডিপি অনুপাত একটি দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা পরিমাপের অন্যতম সূচক। বাংলাদেশে এই অনুপাত অত্যন্ত কম। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৬.৬% থেকে ৭.৪% এর মধ্যে ওঠানামা করছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। এই নিম্ন অনুপাতের কারণে সরকারকে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হয়।

৪. জটিল ও পরিবর্তনশীল কর আইন

বাংলাদেশের কর আইন, যেমন আয়কর আইন, ২০২৩ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২, বেশ জটিল। এছাড়া, প্রতিবছর অর্থ আইনের মাধ্যমে কর আইনে ঘন ঘন পরিবর্তন আনা হয়, যা করদাতা এবং কর কর্মকর্তাদের জন্য বোঝা কঠিন করে তোলে। এই জটিলতার কারণে কর পরিপালনের খরচ বৃদ্ধি পায় এবং অনেক ক্ষেত্রে কর ফাঁকির সুযোগ তৈরি হয়।

৫. কেন্দ্রীভূত কর প্রশাসন

বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা মূলত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) দ্বারা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত হয়। এনবিআর-এর অধীনে তিনটি প্রধান উইং—আয়কর, কাস্টমস এবং ভ্যাট—কর সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত। এই কেন্দ্রীভূত কাঠামো নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে সহায়তা করলেও মাঠ পর্যায়ে দক্ষতার অভাব এবং দীর্ঘসূত্রিতার মতো সমস্যাও তৈরি করে।

৬. ব্যাপক কর অব্যাহতি ও প্রণোদনা

বিনিয়োগ আকর্ষণ, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং নির্দিষ্ট শিল্প খাতের প্রসারের জন্য সরকার প্রায়শই কর অব্যাহতি, কর অবকাশ (Tax Holiday) এবং বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করে। তৈরি পোশাক, তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো খাতগুলো এর প্রধান সুবিধাভোগী। যদিও এই পদক্ষেপগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক, তবে এর ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে হয়, যা কর आधारকে (Tax Base) সংকুচিত করে।

৭. সারচার্জ ও পরিবেশগত সারচার্জের উপস্থিতি

ধনীদের উপর অতিরিক্ত কর আরোপের মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশে সারচার্জ (Surcharge) ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। নির্দিষ্ট সীমার বেশি সম্পদ থাকা ব্যক্তিদের তাদের আয়করের উপর অতিরিক্ত সারচার্জ প্রদান করতে হয়। এছাড়া, পরিবেশ দূষণকারী পণ্যের উপরও সারচার্জ আরোপের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

৮. কর ফাঁকি ও দুর্নীতির প্রভাব

কর ফাঁকি বাংলাদেশের কর ব্যবস্থার একটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। বিপুল পরিমাণ অর্থ কর জালের বাইরে থেকে যায়, যা কালো টাকার অর্থনীতিকে উৎসাহিত করে। এর পাশাপাশি, কর প্রশাসনে দুর্নীতি এবং স্বচ্ছতার অভাবও রাজস্ব আদায়ে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। এই সমস্যাগুলো কর ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা তৈরি করে এবং স্বেচ্ছায় কর পরিপালনকে নিরুৎসাহিত করে।

৯. আধুনিকীকরণ ও অটোমেশনের প্রচেষ্টা

চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সরকার কর ব্যবস্থাকে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল, ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (EFD) চালু, এবং কর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অটোমেশন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই উদ্যোগগুলোর মূল লক্ষ্য হলো কর সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে সহজ, স্বচ্ছ এবং আরও দক্ষ করে তোলা।

কর প্রশাসন ও এর চ্যালেঞ্জসমূহ

বাংলাদেশের কর প্রশাসন ব্যবস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) দ্বারা পরিচালিত হয়, যা দেশের রাজস্ব সংগ্রহের প্রধান সংস্থা। তবে এই প্রশাসন ব্যবস্থা বিভিন্ন কাঠামোগত এবং অপারেশনাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যা কার্যকর রাজস্ব আদায়ে বাধা সৃষ্টি করে।

১. প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও দক্ষতার অভাব

কর প্রশাসনের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। কর কর্মকর্তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক কর আইন ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এর ফলে কর নির্ধারণ, নিরীক্ষা এবং বিরোধ নিষ্পত্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। জনবলের স্বল্পতাও এই সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

২. অপর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত অবকাঠামো

যদিও কর ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এখনো পর্যন্ত প্রযুক্তিগত অবকাঠামো পুরোপুরি উন্নত নয়। অনেক ক্ষেত্রে অনলাইন সিস্টেমগুলো সঠিকভাবে কাজ করে না এবং করদাতারা প্রযুক্তি ব্যবহারে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। একটি সমন্বিত এবং স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার অভাব কর ফাঁকি সনাক্তকরণ এবং পরিপালন নিশ্চিত করাকে জটিল করে তোলে।

৩. দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাব

কর প্রশাসনে দুর্নীতি একটি গভীর সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান। কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে করদাতারা হয়রানির শিকার হন এবং কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পান। স্বচ্ছতার অভাবে কর নির্ধারণ এবং সংগ্রহের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যা কর ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাকে কমিয়ে দেয়।

৪. করদাতাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ও অনাগ্রহ

বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক যোগ্য করদাতা এখনো কর জালের বাইরে রয়েছেন। এর একটি বড় কারণ হলো কর প্রদান সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। অনেকেই কর দেওয়াকে একটি হয়রানি বা অতিরিক্ত বোঝা বলে মনে করেন। একটি ইতিবাচক কর সংস্কৃতি (Tax Culture) গড়ে তুলতে না পারাটা কর ভিত্তি প্রশস্ত করার পথে একটি বড় বাধা।

৫. আইন প্রয়োগে শিথিলতা

কর আইন প্রয়োগে অনেক সময় শিথিলতা দেখা যায়। প্রভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ না করার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। এটি একটি বৈষম্যমূলক পরিবেশ তৈরি করে এবং সাধারণ করদাতাদের কর প্রদানে নিরুৎসাহিত করে। শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন।

উপসংহার

সার্বিকভাবে, বাংলাদেশের কর কাঠামো একটি মিশ্র প্রকৃতির ব্যবস্থা, যেখানে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক থাকার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতাও বিদ্যমান। পরোক্ষ করের উপর অধিক নির্ভরশীলতা এবং প্রত্যক্ষ করের স্বল্প অবদান এই কাঠামোর প্রধান বৈশিষ্ট্য, যা দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে একটি প্রতিগামী চরিত্র দিয়েছে। কর-জিডিপির নিম্ন অনুপাত, জটিল আইন, প্রশাসনিক দুর্বলতা, কর ফাঁকি এবং দুর্নীতির মতো চ্যালেঞ্জগুলো দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

তবে আশার কথা হলো, সরকার কর ব্যবস্থা সংস্কারের গুরুত্ব উপলব্ধি করে আধুনিকীকরণ ও অটোমেশনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। অনলাইন রিটার্ন দাখিল, কর জালের সম্প্রসারণ এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপগুলো সঠিক পথে চালিত হলে ভবিষ্যতে রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি দক্ষ, স্বচ্ছ এবং ন্যায়ভিত্তিক কর কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে এটি কেবল সরকারের রাজস্বই বাড়াবে না, বরং অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে একটি টেকসই উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

একই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট

বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎসসমূহ আলোচনা কর।

বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎসসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তার জনগণের কল্যাণে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়, যা মূলত কর রাজস্ব ও কর-বহির্ভূত রাজস্ব থেকে সংগৃহীত হয়। কর রাজস্বের মধ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), আয়কর, এবং আমদানি শুল্ক প্রধান। অন্যদিকে, কর-বহির্ভূত রাজস্বের উৎসগুলো হলো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ, সুদ, প্রশাসনিক ফি, জরিমানা, ভাড়া ও ইজারা এবং টোল। এই আর্টিকেলে সরকারের আয়ের প্রতিটি উৎস, তাদের গুরুত্ব এবং দেশের অর্থনীতিতে এদের ভূমিকা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ প্রদান করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।

পড়ুন

বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎসসমূহ আলোচনা কর।

বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎসসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তার জনগণের কল্যাণে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়, যা মূলত কর রাজস্ব ও কর-বহির্ভূত রাজস্ব থেকে সংগৃহীত হয়। কর রাজস্বের মধ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), আয়কর, এবং আমদানি শুল্ক প্রধান। অন্যদিকে, কর-বহির্ভূত রাজস্বের উৎসগুলো হলো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ, সুদ, প্রশাসনিক ফি, জরিমানা, ভাড়া ও ইজারা এবং টোল। এই আর্টিকেলে সরকারের আয়ের প্রতিটি উৎস, তাদের গুরুত্ব এবং দেশের অর্থনীতিতে এদের ভূমিকা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ প্রদান করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।

পড়ুন