Skip to main content

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোচনা কর

মেফতাহুল তম্মীএকাডেমিক গবেষক ও লেখক

ভূমিকা

গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সমান অংশগ্রহণ অপরিহার্য। রাজনীতি যেহেতু রাষ্ট্র পরিচালনার মূল হাতিয়ার, সেহেতু এই প্রক্রিয়ায় নারীদের সক্রিয় ভূমিকা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সুষম উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ এখনও সীমিত এবং নানা প্রতিবন্ধকতায় পরিপূর্ণ। যদিও দেশের শীর্ষ দুটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে দীর্ঘকাল ধরে নারীরাই রয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের দেখা গেছে, তবুও তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সার্বিক রাজনীতিতে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ এখনও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।

ঐতিহাসিকভাবে сложиত পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ বৈষম্য, সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার মতো বহুবিধ কারণ নারীদের রাজনৈতিক পথচলাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ এখনো সীমিত। ফলে, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও তা பெரும்பாலும் প্রতীকী এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের প্রভাব এখনো নগণ্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এই প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা প্রয়োজন।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা

বাংলাদেশের নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পথে অন্যতম প্রধান বাধা হলো গভীরভাবে প্রোথিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিকূলতা। এই বাধাগুলো নারীদের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয় এবং তাদের পথচলাকে অত্যন্ত কঠিন করে তোলে।

১. পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা

বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো মূলত পিতৃতান্ত্রিক, যেখানে পুরুষকে কর্তা এবং নারীকে প্রধানত গৃহিণী হিসেবে দেখার মানসিকতা প্রবল। এই ব্যবস্থায় सार्वजनिक (public) পরিসর, বিশেষ করে রাজনীতিকে পুরুষের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যখন কোনো নারী প্রচলিত ধারণা ভেঙে রাজনীতিতে আসতে চান, তখন তাকে পরিবার, সমাজ এবং এমনকি নিজ দলের পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাকে "খারাপ নারী" হিসেবে চিহ্নিত করা বা তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো নেতিবাচক সামাজিক চাপ মোকাবেলা করতে হয়। এই মানসিকতার কারণে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

২. প্রচলিত লিঙ্গীয় ভূমিকা (Gender Roles)

সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত লিঙ্গীয় ভূমিকা নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পথে একটি বড় বাধা। যুগ যুগ ধরে নারীদের ঘরের কাজ, সন্তান লালন-পালন এবং সংসার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই 'দ্বৈত ভূমিকা' পালনের পর তাদের পক্ষে রাজনীতির জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও শ্রম দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাত-বিরাতে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ, নির্বাচনী প্রচারণা চালানো বা দেশব্যাপী ভ্রমণ করা—এগুলো পারিবারিক ও সামাজিক প্রত্যাশার সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় অনেক নারী রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হন।

৩. ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অপব্যাখ্যা

ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে প্রায়শই নারীদের নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করা হয়। একটি গোষ্ঠী নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করা বা জনসমক্ষে নেতৃত্ব দেওয়াকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে "অনুমোদিত নয়" বলে প্রচারণা চালায়। ফতোয়ার মাধ্যমে নারীদের ভোটদানে বাধা দেওয়া বা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে অবৈধ আখ্যা দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। এই ধরনের প্রচারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে এবং নারীদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, ফলে তারা রাজনীতিতে আসতে দ্বিধা বোধ করে।

৪. শিক্ষার অভাব ও অসচেতনতা

শিক্ষার অভাব নারীদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে ওঠার পথে একটি বড় বাধা। বাংলাদেশে নারী শিক্ষার হার বাড়লেও প্রান্তিক পর্যায়ে এখনও অনেক নারী শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার অভাবে তারা নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার, দেশের আইনকানুন এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারে না। ফলে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস তাদের মধ্যে তৈরি হয় না, যা তাদের রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার অন্যতম কারণ।

অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা

রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য আর্থিক সচ্ছলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থনৈতিকভাবে পরাধীন হওয়ায় বাংলাদেশের নারীরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হন।

১. অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা

বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী অর্থনৈতিকভাবে পুরুষের উপর নির্ভরশীল। পারিবারিক সম্পদ বা সম্পত্তিতে তাদের সমান অধিকার না থাকায় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হওয়ায় তাদের নিজস্ব কোনো আর্থিক ভিত্তি থাকে না। রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য, বিশেষ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা বহন করার সামর্থ্য অধিকাংশ নারীর নেই। এই অর্থনৈতিক পরাধীনতা তাদের রাজনৈতিক महत्वाकांक्षाকে সীমিত করে ফেলে।

২. নির্বাচনী ব্যবস্থার ব্যয়বহুলতা

বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা, জনসভা আয়োজন, পোস্টার ছাপানো এবং কর্মীদের ব্যবস্থাপনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। রাজনৈতিক দলগুলোও সাধারণত এমন প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দিতে চায়, যারা নির্বাচনে অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম। নারীদের হাতে প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় তারা দলীয় মনোনয়ন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। এছাড়া, রাজনীতিতে কালো টাকা এবং পেশিশক্তির যে প্রভাব রয়েছে, সেখানে নারীদের পক্ষে টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে যায়।

৩. দ্বৈত ভূমিকা ও সময়ের অভাব

কর্মজীবী নারীদের প্রায়শই घर এবং কর্মক্ষেত্র—এই দুই দায়িত্ব একসাথে সামলাতে হয়। এই দ্বৈত ভূমিকা পালন করার পর রাজনীতির মতো একটি সার্বক্ষণিক পেশায় সময় দেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য যে পরিমাণ সময়, শ্রম ও মানসিক শক্তির প্রয়োজন, তা পারিবারিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের পর অবশিষ্ট থাকে না। এটিও তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পথে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করে।

রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা

রাজনৈতিক দল এবং কাঠামোর অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোও নারীদের অংশগ্রহণের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করে। দলগুলোর পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং সদিচ্ছার অভাব নারীদের রাজনীতিতে উঠে আসাকে কঠিন করে তুলেছে।

১. রাজনৈতিক দলগুলোর পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামো এখনও মূলত পুরুষতান্ত্রিক। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত পুরুষ নেতাদেরই আধিপত্য দেখা যায়। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের মতামত উপেক্ষিত হয়। অনেক সময় নারীদের শুধুমাত্র দলের নারী শাখা বা সংরক্ষিত আসনেই সীমাবদ্ধ রাখা হয় এবং মূলধারার রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করা হয়। যদিও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO) অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর সকল কমিটিতে ৩৩% নারী সদস্য রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, কিন্তু কোনো প্রধান দলই এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।

২. মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বৈষম্য

নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নারীরা প্রায়শই বৈষম্যের শিকার হন। রাজনৈতিক দলগুলো জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাকেই বেশি গুরুত্ব দেয় এবং পুরুষ প্রার্থীদেরকেই "জেতার মতো প্রার্থী" (winnable candidate) হিসেবে বিবেচনা করে। নারীদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাবকে কারণ দেখিয়ে তাদের মনোনয়ন দিতে চায় না। এর ফলে প্রত্যক্ষ নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা এখনও অত্যন্ত কম।

৩. সংরক্ষিত নারী আসনের সীমাবদ্ধতা

জাতীয় সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে ৫০টি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তবে এই ব্যবস্থা নারীর প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কতটা ভূমিকা রাখছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংরক্ষিত আসনের সদস্যরা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না, বরং সংসদে থাকা দলগুলোর আনুপাতিক হারে মনোনীত হন। এর ফলে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকার পরিবর্তে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি অনুগত থাকতে বাধ্য হন। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ক্ষমতা ও কার্যাবলী প্রতীকী হয়ে থাকে এবং তারা সাধারণ আসনের সংসদ সদস্যদের মতো প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না।

৪. রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহিংসতা, সংঘাত এবং পেশিশক্তির ব্যবহার একটি সাধারণ ঘটনা। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রায়ই হামলা, হুমকি এবং শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এই সহিংসতাপূর্ণ পরিবেশ নারীদের জন্য অত্যন্ত নিরাপত্তাহীন। পরিবার থেকেও তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। নারী রাজনীতিবিদদের প্রায়শই ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্রহনন এবং সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, যা তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করে।

কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা

কিছু কাঠামোগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পথে বাধা সৃষ্টি করে, যা আইনি ও প্রশাসনিক পর্যায়ে বিদ্যমান।

১. আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব

নারীর অধিকার রক্ষা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা থাকলেও সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগের অভাব রয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, সম্পত্তিতে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার আইনগুলো কার্যকরভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় নারীরা সুরক্ষিত বোধ করেন না। বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা এবং সামাজিক চাপের কারণে অনেক নারী আইনি সহায়তা নিতেও ভয় পান।

২. গণমাধ্যমের ভূমিকা

গণমাধ্যম সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে গণমাধ্যম নারী রাজনীতিবিদদের যথাযথ গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করে না। তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বা যোগ্যতার চেয়ে ব্যক্তিগত জীবন বা পোশাক-পরিচ্ছদকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। নারী রাজনীতিবিদদের নিয়ে নেতিবাচক বা স্টিরিওটাইপিক্যাল প্রতিবেদন তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে এবং রাজনীতিতে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দেয়।

৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অনুপস্থিতি

রাষ্ট্রীয় এবং দলীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের উপস্থিতি এখনও নগণ্য। যদিও শীর্ষ নেতৃত্বে নারী রয়েছেন, মন্ত্রিসভা, সংসদীয় কমিটি এবং দলের স্থায়ী কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ ফোরামে নারীর প্রতিনিধিত্ব হতাশাজনকভাবে কম। এর ফলে নারীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নীতি নির্ধারণে প্রতিফলিত হয় না।

উপসংহার

সার্বিকভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতাসমূহ বহুমাত্রিক এবং গভীরভাবে প্রোথিত। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, সামাজিক কুসংস্কার, অর্থনৈতিক পরাধীনতা, রাজনৈতিক দলগুলোর উদাসীনতা এবং কাঠামোগত দুর্বলতা সম্মিলিতভাবে নারীদের রাজনৈতিক পথচলাকে বাধাগ্রস্ত করছে। যদিও গত কয়েক দশকে নারী শিক্ষায় অগ্রগতি এবং সংবিধানে প্রদত্ত অধিকারের ফলে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, তবে তা এখনও গুণগত মানে রূপান্তরিত হয়নি।

এই প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দলগুলোকে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য আন্তরিক হওয়া, সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার আনা এবং রাজনীতিকে সহিংসতামুক্ত করা অপরিহার্য। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং গণমাধ্যমকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। সকল স্তরে নারীর অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রকৃত অর্থে অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠবে এবং সামগ্রিক উন্নয়ন টেকসই হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

একই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট

নারী ক্ষমতায়নের সংজ্ঞা দাও। নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিবন্ধকতাসমূহ আলোচনা কর।

নারী ক্ষমতায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নারীরা তাদের জীবনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং পারিবারিক সকল ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করে। এটি নারীদের আত্মশক্তি, আত্মমর্যাদা এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এই আলোচনায় নারী ক্ষমতায়নের সংজ্ঞা এবং এর পথে বিদ্যমান প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। সামাজিক কুসংস্কার, পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা, অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা, রাজনৈতিক উদাসীনতা, শিক্ষার অভাব এবং আইনগত সীমাবদ্ধতা নারীর ক্ষমতায়নের পথে অন্যতম বাধা। এই প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য।

পড়ুন

বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের প্রকৃতি ও বিকাশ আলোচনা কর।

বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের প্রকৃতি ও বিকাশ একটি বহুমাত্রিক ও ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া। ঔপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু হয়ে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা উত্তরকালে এই আন্দোলন বিভিন্ন পর্যায়ে বিকশিত হয়েছে। বেগম রোকেয়ার নারী শিক্ষার সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে নারীদের আত্মত্যাগ, এবং পরবর্তীতে আইনি ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের মাধ্যমে নারী আন্দোলন সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান সময়েও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই আন্দোলন সক্রিয় রয়েছে।

পড়ুন