১৯৭২ সালের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণয়ন ইতিহাস, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং এর সীমাবদ্ধতা বিস্তারিতভাবে আলোচনা কর।
ভূমিকা
১৯৭২ সালের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান হলো সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য একটি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ দলিল। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে এই সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। এটি কেবল একটি আইনগত কাঠামোই নয়, বরং এটি ছিল বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়, সার্বভৌমত্ব এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের মূর্ত প্রতীক।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের জন্য মাত্র দশ মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাফল্য। এই সংবিধানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদের মতো রাষ্ট্রীয় মূলনীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করে একটি শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা হয়েছিল। এর প্রণয়ন ইতিহাস যেমন ঘটনাবহুল, তেমনি এর গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল বৈশিষ্ট্যগুলো একে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধানের মর্যাদা দিয়েছে। তবে সময়ের পরিক্রমায় এর কিছু সীমাবদ্ধতাও পরিলক্ষিত হয়েছে। এই আলোচনায় ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রণয়নের ইতিহাস, এর প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং সীমাবদ্ধতাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত দ্রুত এবং সুসংগঠিত। এর পেছনের ইতিহাসটি মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করে, যা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে কার্যকর ছিল। এই ঘোষণাপত্রই ছিল বাংলাদেশের সংবিধানের মূল ভিত্তি।
স্বাধীনতার পর, ১৯৭২ সালের ১১ই জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২’ জারি করেন। এর মাধ্যমে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের সূচনা হয়। এরপর একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২৩শে মার্চ ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ’ জারি করা হয়।
এই আদেশবলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে গণপরিষদ (Constituent Assembly) গঠন করা হয়। গণপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৪০৩ জন। এর একমাত্র দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা।
গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে ১৯৭২ সালের ১০ই এপ্রিল। এই অধিবেশনে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘সংবিধান খসড়া প্রণয়ন কমিটি’ গঠন করা হয়। এই কমিটি বিভিন্ন দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে এবং জনগণের মতামত আহ্বান করে। প্রায় ৯৮টি সুপারিশ গ্রহণ করে কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে ৭৪টি বৈঠকে মিলিত হয়।
কমিটি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সংবিধানের খসড়া চূড়ান্ত করে। ১৯৭২ সালের ১২ই অক্টোবর খসড়া সংবিধান বিল আকারে গণপরিষদে উত্থাপন করা হয়। এরপর ১৯শে অক্টোবর থেকে এর ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর, ৪ঠা নভেম্বর, ১৯৭২ তারিখে গণপরিষদে সংবিধান বিলটি চূড়ান্তভাবে গৃহীত ও পাস হয়।
অবশেষে, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকীতে, অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭২ সাল থেকে এই সংবিধান কার্যকর হয়। মাত্র দশ মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন ছিল একটি নবজাতক রাষ্ট্রের জন্য এক বিশাল অর্জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণপরিষদে বলেছিলেন, "এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।"
১৯৭২ সালের সংবিধানের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল বৈশিষ্ট্যসমূহ
১৯৭২ সালের সংবিধানে এমন অনেক বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল যা এটিকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল দলিলে পরিণত করে। এর মূল ভিত্তি ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। নিম্নে এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো:
১. লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান
বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত দলিল। এতে একটি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ, ১৫৩টি অনুচ্ছেদ এবং ৪টি তফসিল ছিল। এটি একটি দুষ্পরিবর্তনীয় (Rigid) সংবিধান, কারণ এর যেকোনো সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদের মোট সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। এর ফলে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সহজে পরিবর্তন করা যায় না, যা এর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
২. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি
সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি ঘোষণা করা হয়, যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন। এই মূলনীতিগুলো হলো:
- জাতীয়তাবাদ: ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
- সমাজতন্ত্র: শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমাজতন্ত্রকে গ্রহণ করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক সমতা ও সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা।
- গণতন্ত্র: রাষ্ট্রকে একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যেখানে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।
- ধর্মনিরপেক্ষতা: রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো ধর্মকে বিশেষ মর্যাদা না দিয়ে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
৩. জনগণের সার্বভৌমত্ব ও সংবিধানের প্রাধান্য
সংবিধানের ৭নং অনুচ্ছেদে ঘোষণা করা হয় যে, "প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ"। এটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি। மேலும், এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংবিধান হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। এটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
৪. সংসদীয় পদ্ধতির সরকার
১৯৭২ সালের সংবিধানে ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতির সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হন রাষ্ট্রের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান, কিন্তু প্রকৃত নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার ওপর ন্যস্ত থাকে। মন্ত্রিসভা তাদের কাজের জন্য আইনসভার (জাতীয় সংসদ) কাছে দায়বদ্ধ থাকে, যা সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
৫. মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা
সংবিধানের তৃতীয় ভাগে নাগরিকদের জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মধ্যে আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সমান অধিকার, বাকস্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা এবং নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ অধিকারগুলো অন্তর্ভুক্ত। কোনো আইন দ্বারা এই অধিকারগুলো ক্ষুণ্ণ হলে নাগরিকরা আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন।
৬. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
সংবিধানে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। বিচারকদের নিয়োগ, অপসারণ এবং কার্যপরিধি এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে তারা নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারেন। এটি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য।
৭. এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা
বাংলাদেশে কোনো প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্য না থাকায় এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে, যা জাতীয় সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখতে সহায়ক।
৮. সর্বজনীন ভোটাধিকার
জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ বা শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সকল নাগরিককে ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। এটি ছিল গণতন্ত্রায়নের পথে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
১৯৭২ সালের সংবিধানের সীমাবদ্ধতা
১৯৭২ সালের সংবিধান অনেক প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতাও ছিল, যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। নিম্নে প্রধান সীমাবদ্ধতাগুলো আলোচনা করা হলো:
১. অনুচ্ছেদ ৭০ এবং সংসদ সদস্যদের সীমাবদ্ধতা
সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য যদি তার দলের বিরুদ্ধে ভোট দেন বা দল থেকে পদত্যাগ করেন, তবে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। এই বিধানটি সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ক্ষমতাকে খর্ব করে এবং তাদেরকে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত থাকতে বাধ্য করে। এর ফলে সংসদে গঠনমূলক বিতর্ক এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। একে প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সহায়ক হিসেবেও সমালোচনা করা হয়।
২. জরুরি অবস্থা জারির বিধান
সংবিধানে জরুরি অবস্থা জারির ব্যাপক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে, যা মৌলিক অধিকারগুলোকে স্থগিত করতে পারে। যদিও এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়, তবে এর অপব্যবহারের ঝুঁকি থেকে যায়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে এই বিধানটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে ব্যবহৃত হয়েছে।
৩. রাষ্ট্রপতির দুর্বল সাংবিধানিক অবস্থান
সংসদীয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তার ক্ষমতা মূলত আলংকারিক। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া তার কাজ করার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। এই ব্যবস্থা সংসদীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও, এটি রাষ্ট্রপতিকে একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক ভারসাম্য রক্ষাকারী ভূমিকা পালনে বাধা দেয়।
৪. বিচারক অপসারণের প্রক্রিয়া
মূল সংবিধানে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত ছিল, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর নির্বাহী ও আইন বিভাগের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করে। যদিও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, এই বিধানটি বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
৫. মৌলিক অধিকারের ওপর যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ
সংবিধানে মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হলেও, "জনস্বার্থে" বা "যুক্তিসঙ্গত কারণে" আইন দ্বারা এই অধিকারগুলোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপের সুযোগ রাখা হয়েছে। "জনস্বার্থ" বা "যুক্তিসঙ্গত কারণ" এর কোনো সুস্পষ্ট সংজ্ঞা না থাকায় সরকার সহজেই আইন প্রণয়ন করে নাগরিক অধিকার সংকুচিত করতে পারে। এর ফলে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন সহজ হয়েছে।
৬. সমাজতন্ত্রের অস্পষ্ট ধারণা
সংবিধানে সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হলেও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল না। মিশ্র অর্থনীতির বাস্তবতায় এর প্রয়োগ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে এই নীতি থেকে রাষ্ট্র অনেকাংশে সরে আসে।
উপসংহার
১৯৭২ সালের সংবিধান নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এটি ছিল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতির নবযাত্রার দিকনির্দেশনা, যা জনগণের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফসল। এর প্রণয়ন ইতিহাস যেমন প্রেরণাদায়ক, তেমনি এর গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল বৈশিষ্ট্যগুলো—যেমন জনগণের সার্বভৌমত্ব, মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি, সংসদীয় গণতন্ত্র এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা—একটি আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর কিছু সীমাবদ্ধতা, বিশেষ করে ৭০ অনুচ্ছেদের মতো বিধান, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করেছে বলে মনে করা হয়। তা সত্ত্বেও, বাহাত্তরের সংবিধানের মূল চেতনা—একটি শোষণহীন, ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ প্রতিষ্ঠা—এখনো বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক। বিভিন্ন সংশোধনী ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেলেও, এই সংবিধানই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন এবং জাতীয় পরিচয়ের মূল ভিত্তি হিসেবে আজও টিকে আছে।
১৯৭১ সালের নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের সামরিক ও কূটনৈতিক ঘটনাবলীর একটি পর্যায়ক্রমিক বিবরণ দাও।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা মূল্যায়ন কর। এই সময়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য, ব্যর্থতা এবং তাদের পারস্পরিক সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক কীভাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (যেমন: সংসদ, নির্বাচন কমিশন) দুর্বল করেছে তা বিশ্লেষণ কর।
সম্পর্কিত পোস্ট
একই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) এবং শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) একটি তুলনামূলক নীতি ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন কর।
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) ও শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) নীতি ও কার্যক্রমের তুলনামূলক মূল্যায়ন। এই নিবন্ধে অর্থনৈতিক সংস্কার, বৈদেশিক নীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
The main challenge of democracy in Bangladesh is not the holding of elections, but the establishment of democratic institutions and culture. – এই উক্তিটির আলোকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূল প্রতিবন্ধকতাসমূহ (যেমন: রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) আলোচনা কর।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব, এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কীভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করছে তা এই লেখায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।