বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক ও ক্ষমতার ভারসাম্য আলোচনা কর। এই ভারসাম্য বিভিন্ন সংশোধনীর মাধ্যমে কীভাবে প্রভাবিত হয়েছে?
ভূমিকা
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, যা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ নির্ধারণ করে। সংবিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশ রাষ্ট্র তিনটি প্রধান অঙ্গের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়: নির্বাহী বিভাগ (Executive), আইন বিভাগ (Legislature) এবং বিচার বিভাগ (Judiciary)। আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এই তিনটি বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার একটি সুস্পষ্ট বিভাজন ও ভারসাম্য থাকা অপরিহার্য। একে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি (Separation of Powers) বলা হয়।
বাংলাদেশের সংবিধান ক্ষমতার কঠোর স্বতন্ত্রীকরণের পরিবর্তে একটি ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে প্রতিটি বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। এই ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি (Checks and Balances) বলা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো কোনো একটি বিভাগের হাতে যেন অতিরিক্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না হয় এবং জনগণের অধিকার ও সংবিধানের सर्वोच्चতা সুরক্ষিত থাকে।
তবে, ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আনা সাংবিধানিক সংশোধনীগুলো এই ক্ষমতার ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এই উত্তরটিতে বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যকার সম্পর্ক, তাদের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং বিভিন্ন সংশোধনীর মাধ্যমে এই ভারসাম্যের ওপর সৃষ্ট প্রভাব বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
সরকারের তিনটি বিভাগের সাংবিধানিক ভিত্তি ও পরিচিতি
বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে সরকারের তিনটি বিভাগের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগের সাংবিধানিক ভিত্তি ও পরিচিতি নিচে তুলে ধরা হলো:
১. নির্বাহী বিভাগ
নির্বাহী বিভাগ সরকারের সেই অংশ যা আইন প্রয়োগ, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং প্রশাসনিক কার্যাবলী সম্পাদন করে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাহী বিভাগ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভাকে নিয়ে গঠিত।
- রাষ্ট্রপতি: তিনি রাষ্ট্রের প্রধান, তবে তাঁর ক্ষমতা মূলত আনুষ্ঠানিক। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ছাড়া অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য।
- প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা: সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হলেন নির্বাহী ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। সংবিধানের ৫৫(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বে প্রযুক্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন।
২. আইন বিভাগ
আইন বিভাগ বা জাতীয় সংসদ (Jatiya Sangsad) বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা। এটি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে এক কক্ষবিশিষ্ট একটি আইনসভা।
- গঠন: সংবিধানে ৩০০টি নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনসহ মোট ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত।
- কার্যাবলী: এর প্রধান কাজ হলো আইন প্রণয়ন, বাজেট অনুমোদন, সংবিধান সংশোধন এবং সরকারের নির্বাহী কার্যাবলী পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা। সংসদ বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
৩. বিচার বিভাগ
বিচার বিভাগ আইন ব্যাখ্যা করে এবং न्यायবিচার প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সুপ্রিম কোর্ট এবং তার অধীনস্থ আদালতসমূহ নিয়ে গঠিত।
- সুপ্রিম কোর্ট: এটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং দুটি বিভাগে বিভক্ত—হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ।
- কার্যাবলী: বিচার বিভাগের মূল কাজ হলো সংবিধান রক্ষা করা, আইনের ব্যাখ্যা দেওয়া, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা এবং নির্বাহী ও আইন বিভাগের কার্যক্রম সংবিধানসম্মত কিনা তা পর্যালোচনা (Judicial Review) করা।
নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক
বাংলাদেশের সংবিধানে এই তিনটি বিভাগের মধ্যে একটি জটিল ও আন্তঃসম্পর্কিত ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যা ক্ষমতার ভারসাম্যের ভিত্তি স্থাপন করে।
১. নির্বাহী ও আইন বিভাগের সম্পর্ক
বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাহী ও আইন বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং অনেকাংশে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
- সরকার গঠন: নির্বাহী বিভাগের প্রধান অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সংসদ সদস্য হতে হয় এবং সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন হতে হয়। মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যকেও সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
- আইন প্রণয়ন: আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে উভয় বিভাগের ভূমিকা রয়েছে। সাধারণত মন্ত্রিসভা বা নির্বাহী বিভাগই অধিকাংশ বিল সংসদে উত্থাপন করে এবং সংসদ তা আলোচনা ও পর্যালোচনার পর পাস করে।
- পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ: সংসদ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, মুলতবি প্রস্তাব, নিন্দা প্রস্তাব এবং অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিতে পারেন, যা নির্বাহী বিভাগের হাতে একটি শক্তিশালী ক্ষমতা।
২. নির্বাহী ও বিচার বিভাগের সম্পর্ক
এই দুই বিভাগের সম্পর্ক বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, যা একটি বিতর্কের বিষয়।
- বিচারক নিয়োগ: সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ দেন। এটি নির্বাহী বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা যা বিচার বিভাগের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা: বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের যেকোনো আদেশ বা কার্যক্রম সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হলে তা অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। এই ক্ষমতাকে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা (Judicial Review) বলা হয়।
- অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ: সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃংখলার বিষয়টি রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত, যা তিনি সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে প্রয়োগ করেন। এটি নিয়েও বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
৩. আইন ও বিচার বিভাগের সম্পর্ক
আইন প্রণয়ন ও তার ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এই দুই বিভাগের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- আইনের ব্যাখ্যা: আইন বিভাগ আইন তৈরি করে, আর বিচার বিভাগ সেই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা যাচাই করে এবং তার ব্যাখ্যা প্রদান করে।
- সাংবিধানিক सर्वोच्चতা রক্ষা: জাতীয় সংসদ কর্তৃক পাস করা কোনো আইন যদি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তবে সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
- বিচারপতিদের অপসারণ: বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, এটি একটি দীর্ঘ বিতর্কের বিষয়। মূল সংবিধানে এই ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে দেওয়া হয়। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে পুনরায় সংসদের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করে দেয়।
ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি এবং বিভিন্ন সংশোধনীর প্রভাব
বাংলাদেশের সংবিধানের যাত্রাপথে বিভিন্ন সংশোধনী ক্ষমতার ভারসাম্যে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী ও তার প্রভাব নিচে আলোচনা করা হলো:
১. চতুর্থ সংশোধনী (১৯৭৫)
১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনী বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় একটি আমূল পরিবর্তন আনে। এর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতি বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
- প্রভাব: এই সংশোধনীতে নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে রাষ্ট্রপতির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে একদলীয় (বাকশাল) ব্যবস্থা চালু করা হয়। এর ফলে আইন ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে খর্ব হয় এবং ক্ষমতার ভারসাম্য সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যায়।
২. অষ্টম সংশোধনী (১৯৮৮)
১৯৮৮ সালের ৭ জুন এই সংশোধনী আনা হয়। এর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বিভাগের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়।
- প্রভাব: হাইকোর্টের বেঞ্চ বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি বিচার বিভাগের অখণ্ডতার ওপর আঘাত হিসেবে দেখা হয়। পরবর্তীতে, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বনাম বাংলাদেশ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এই সংশোধনীকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিপন্থী বলে বাতিল করে দেয়। এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো মতবাদ (Basic Structure Doctrine) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিচার বিভাগের ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
৩. দ্বাদশ সংশোধনী (১৯৯১)
গণ-অভ্যুত্থানের পর ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশ পুনরায় সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় ফিরে আসে।
- প্রভাব: এর ফলে নির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাত থেকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার হাতে ফিরে আসে। আইন বিভাগের কাছে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং ক্ষমতার ভারসাম্য অনেকটাই ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের আদলে ফিরে আসে।
৪. ত্রয়োদশ সংশোধনী (১৯৯৬)
এই সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
- প্রভাব: এটি একটি অস্থায়ী নির্বাহী বিভাগ তৈরি করে যা নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করত। যদিও এটি ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার একটি প্রচেষ্টা ছিল, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা বাতিল করা হয়, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয়।
৫. পঞ্চদশ সংশোধনী (২০১১)
এই সংশোধনীতে সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপন করা হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
- প্রভাব: তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের ফলে নির্বাচনকালীন নির্বাহী ক্ষমতা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের হাতেই থেকে যায়, যা ক্ষমতার ভারসাম্যকে আবারও ক্ষমতাসীন দলের দিকে ঝুঁকিয়ে দেয় বলে বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করে।
৬. ষোড়শ সংশোধনী (২০১৪)
এই সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মূল সংবিধানেও এই বিধানটি ছিল।
- প্রভাব: এই সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে এই সংশোধনীকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো এবং ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পরিপন্থী বলে বাতিল করে দেয়। এই রায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি নির্বাহী ও আইন বিভাগের সাথে বিচার বিভাগের দ্বন্দ্বকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে।
উপসংহার
বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে একটি পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের সম্পর্ক বিদ্যমান। তত্ত্বগতভাবে এই তিনটি বিভাগ স্বাধীন হলেও বাস্তবে, বিশেষ করে সংসদীয় গণতন্ত্রের কারণে, নির্বাহী বিভাগের প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রধানমন্ত্রীর হাতে নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে।
সাংবিধানিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিভিন্ন সংশোধনীর মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একচ্ছত্র রাষ্ট্রপতি শাসন থেকে শুরু করে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন এবং ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার প্রচেষ্টা—এই সবগুলো ঘটনাই ক্ষমতার ভারসাম্যের গতিশীল প্রকৃতিকে তুলে ধরে।
পরিশেষে বলা যায়, একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের জন্য সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার সুস্থ ভারসাম্য برقرار রাখা অপরিহার্য। এর জন্য প্রয়োজন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এই ভারসাম্য রক্ষা করা গেলেই সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা (ত্রয়োদশ সংশোধনী) প্রবর্তনের কারণ এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাতিলের পক্ষে-বিপক্ষের যুক্তিগুলো কী ছিল? বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এর প্রভাব সমালোচনামূলকভাবে বিশ্লেষণ কর।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাস হলো ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় রাজনীতির মধ্যকার টানাপোড়েনের ইতিহাস— ১৯৭২ থেকে বর্তমান পর্যন্ত সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনীর আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
সম্পর্কিত পোস্ট
একই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) এবং শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) একটি তুলনামূলক নীতি ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন কর।
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) ও শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) নীতি ও কার্যক্রমের তুলনামূলক মূল্যায়ন। এই নিবন্ধে অর্থনৈতিক সংস্কার, বৈদেশিক নীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
The main challenge of democracy in Bangladesh is not the holding of elections, but the establishment of democratic institutions and culture. – এই উক্তিটির আলোকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূল প্রতিবন্ধকতাসমূহ (যেমন: রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) আলোচনা কর।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব, এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কীভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করছে তা এই লেখায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।