বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পটভূমি হিসেবে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত প্রধান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনাবলীর একটি ধারাবাহিক ও বিশ্লেষণাত্মক বিবরণ দাও।
ভূমিকা
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়, যার দুটি অংশ ছিল পূর্ব বাংলা (পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান। ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন এই দুটি অংশের মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান ছিল। শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের ওপর ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ চালাতে থাকে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই ২৩ বছরের ইতিহাস ছিল বাঙালির বঞ্চনা, সংগ্রাম ও আত্ম-আবিষ্কারের ইতিহাস। এই সময়কালের প্রধান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পটভূমি સ્પષ્ટ হয়ে ওঠে। মূলত, এই সময়কালে সংঘটিত প্রতিটি ঘটনাই বাঙালি জাতিকে ধীরে ধীরে স্বাধীনতার দিকে চালিত করেছে।
১৯৪৭-১৯৫৮: প্রাথমিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার যুগ
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে নানা বিষয়ে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের সূচনা হয়। এই পর্বের ঘটনাগুলো বাঙালির মনে প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র পরিচয়ের বীজ বপন করে এবং তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে।
১. ভাষা আন্দোলন (১৯৪৮-১৯৫২)
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই রাষ্ট্রের ভাষা কী হবে, তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৬ শতাংশ বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও ১৯৪৮ সালে গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার ফলে পূর্ব বাংলার ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ প্রথম ধর্মঘট পালিত হয়।
আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। তৎকালীন সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করলেও ছাত্ররা তা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে শহীদ হন। এই আত্মত্যাগের ফলে আন্দোলন আরও তীব্র হয় এবং অবশেষে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছিল না, এটি ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও জাতীয়তাবাদের প্রথম সফল বহিঃপ্রকাশ।
২. যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন (১৯৫৪)
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম ও গণতন্ত্রী দল মিলে যুক্তফ্রন্ট নামে একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করে। এই জোট ২১-দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেয়, যার মূল বিষয় ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান।
নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট এক অভাবনীয় বিজয় অর্জন করে। পূর্ব বাংলার ২২৩টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৮টি আসন লাভ করে, যেখানে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯টি আসন। এই ফলাফল ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির অনাস্থার এক সুস্পষ্ট রায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এই রায় মেনে নিতে পারেনি। মাত্র ৫৬ দিনের মাথায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করা হয়, যা বাঙালির মনে গভীর হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দেয়।
৩. শাসনতান্ত্রিক সংকট ও বৈষম্য
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একটি গ্রহণযোগ্য সংবিধান প্রণয়নে শাসকরা ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। দীর্ঘ নয় বছর পর ১৯৫৬ সালে যে সংবিধান প্রণীত হয়, তাতেও পূর্ব পাকিস্তানের দাবি-দাওয়া, যেমন পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও অর্থনৈতিক সমতা, উপেক্ষিত হয়। সংবিধানে 'এক ইউনিট' ব্যবস্থা চালু করে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলোকে একত্রিত করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে খর্ব করা। এই বৈষম্যমূলক সংবিধান বাঙালির মনে বিচ্ছিন্নতাবাদের অনুভূতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
১৯৫৮-১৯৬৯: আইয়ুব খানের শাসন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ
১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন। তার এক দশকের স্বৈরশাসনামলে রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক শোষণ এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চরমে পৌঁছায়, যা বাঙালি জাতীয়তাবাদকে আরও সুসংহত ও শক্তিশালী করে তোলে।
১. সামরিক শাসন ও মৌলিক গণতন্ত্র
আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ এবং নেতাদের কারাগারে প্রেরণ করেন। তিনি 'মৌলিক গণতন্ত্র' নামে এক নতুন শাসন ব্যবস্থা চালু করেন, যা ছিল প্রকৃতপক্ষে প্রত্যক্ষ ভোটের অধিকার হরণ করে একটি নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অপকৌশল। এই ব্যবস্থায় দেশের ৮০,০০০ নির্বাচিত প্রতিনিধির (উভয় অংশে ৪০,০০০ করে) মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও আইনসভার সদস্য নির্বাচনের বিধান রাখা হয়, যা সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়।
২. ছয় দফা আন্দোলন (১৯৬৬)
আইয়ুব খানের নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে এবং বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই ছয় দফাকে বাঙালির 'মুক্তির সনদ' বা ম্যাগনাকার্টা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এর মূল দাবি ছিল:
- পাকিস্তানের জন্য ফেডারেল পদ্ধতির সরকার।
- প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র ব্যতীত সকল ক্ষমতা প্রদেশের হাতে ন্যস্ত করা।
- দুই অঞ্চলের জন্য পৃথক মুদ্রা ব্যবস্থা বা সহজ বিনিময়যোগ্য একক মুদ্রা।
- রাজস্ব ও কর ধার্যের ক্ষমতা প্রদেশের হাতে রাখা।
- বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষমতা প্রদেশের হাতে দেওয়া।
- প্রদেশের জন্য আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের অধিকার।
ছয় দফা দ্রুত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ভীত হয়ে আইয়ুব সরকার দমন-পীড়ন শুরু করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
৩. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা (১৯৬৮)
ছয় দফা আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সরকার এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জন বাঙালি সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে 'রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য' নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়, যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, আসামিরা ভারতের সহায়তায় সশস্ত্র পন্থায় পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
কিন্তু এই মামলা বাঙালির মনে বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারা এই মামলাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ধ্বংস করার একটি ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখে। শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে সারা পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
৪. উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯)
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিসহ অন্যান্য দাবিতে ১৯৬৯ সালের শুরুতে পূর্ব পাকিস্তানে এক সর্বাত্মক গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়, যা উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত। ছাত্র সমাজের ১১-দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই আন্দোলন শুরু হয়, যাতে ছয় দফার দাবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আন্দোলনকালে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান, স্কুলছাত্র মতিউর রহমান এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা শহীদ হলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরের দিন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল ছাত্র-জনসভায় শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এই গণঅভ্যুত্থানের ফলেই ২৫শে মার্চ আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
অর্থনৈতিক বৈষম্য: শোষণের ২৩ বছর
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ২৩ বছর ধরে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা পূর্ব পাকিস্তানকে একটি অর্থনৈতিক উপনিবেশে পরিণত করে রেখেছিল। এই অর্থনৈতিক শোষণ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল।
- রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতে বৈষম্য: পূর্ব পাকিস্তান থেকে অর্জিত রাজস্বের সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় করা হতো। পাটের মতো প্রধান রপ্তানি পণ্য পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত হলেও এর থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অধিকাংশই পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পায়ন ও অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত হতো।
- বৈদেশিক সাহায্য ও আমদানিতে বঞ্চনা: প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় করা হতো। এমনকি আমদানি নীতির ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তানের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করা হতো।
- চাকরি ও প্রশাসনে বৈষম্য: বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে বাঙালির প্রতিনিধিত্ব ছিল নগণ্য। সেনাবাহিনীর প্রায় ৯৫ শতাংশ এবং বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চপদে প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মকর্তা ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি।
এই পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বৈষম্য পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছিল এবং সাধারণ মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল।
১৯৭০-এর নির্বাচন ও চূড়ান্ত পর্যায়
আইয়ুব খানের পতনের পর ক্ষমতায় আসেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান। তিনি জনগণের চাপে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তি এক ভোটের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করেন।
এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। এই নিরঙ্কুশ বিজয়ের ফলে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানের সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করে।
কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী, বিশেষ করে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (PPP) ও সামরিক জান্তা, বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে নারাজ ছিল। তারা নানা টালবাহানা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন, যা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চূড়ান্ত সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
উপসংহার
সার্বিকভাবে, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সময়কাল ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ভিত্তি প্রস্তর। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল, তা পরবর্তী প্রতিটি রাজনৈতিক সংগ্রামে আরও শক্তিশালী হয়েছে। যুক্তফ্রন্টের বিজয় ও ষড়যন্ত্রমূলক পতন, ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান—এই প্রতিটি ঘটনাই বাঙালিকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল তীব্র অর্থনৈতিক শোষণ ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, যা তাদের মনে মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে তীব্রতর করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির অবিসংবাদিত রায়কে যখন অস্বীকার করা হলো, তখন স্বাধীনতার সংগ্রাম ব্যতীত আর কোনো বিকল্প পথ খোলা ছিল না। এই ২৩ বছরের ধারাবাহিক বঞ্চনা ও সংগ্রামের ইতিহাসই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল, যার মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাস হলো ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় রাজনীতির মধ্যকার টানাপোড়েনের ইতিহাস— ১৯৭২ থেকে বর্তমান পর্যন্ত সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনীর আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
বাংলাদেশের দলীয় ব্যবস্থার প্রকৃতি, বিকাশ এবং বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর। দেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা অর্জনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা ও নেতৃত্বের ভূমিকার একটি সমালোচনামূলক পর্যালোচনা কর।
সম্পর্কিত পোস্ট
একই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) এবং শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) একটি তুলনামূলক নীতি ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন কর।
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) ও শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) নীতি ও কার্যক্রমের তুলনামূলক মূল্যায়ন। এই নিবন্ধে অর্থনৈতিক সংস্কার, বৈদেশিক নীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
The main challenge of democracy in Bangladesh is not the holding of elections, but the establishment of democratic institutions and culture. – এই উক্তিটির আলোকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূল প্রতিবন্ধকতাসমূহ (যেমন: রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) আলোচনা কর।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব, এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কীভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করছে তা এই লেখায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।