বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের (বৃহৎ শক্তিবর্গ, প্রতিবেশী দেশ ও জাতিসংঘ) ভূমিকার একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ কর।
ভূমিকা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ডের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল না, এটি ছিল তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। একদিকে যেমন চলছিল বাঙালি জাতির উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যা ও নিষ্পেষণ, তেমনই অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চলছিল স্নায়ুযুদ্ধের জটিল মেরুকরণ। এই মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত মিশ্র ও বহুমুখী। বৃহৎ শক্তিবর্গ, প্রতিবেশী দেশসমূহ এবং জাতিসংঘ নিজ নিজ ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত স্বার্থের নিরিখে তাদের অবস্থান গ্রহণ করেছিল। বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল। জাতিসংঘ এই মানবিক বিপর্যয় থামাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই জটিল ও পরস্পরবিরোধী ভূমিকা একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা
তৎকালীন স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৃহৎ শক্তিবর্গ তাদের নিজ নিজ বলয়ের প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের ভূমিকা মূলত কৌশলগত স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়।
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত এবং বাঙালি স্বার্থের পরিপন্থী। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের 'পাকিস্তান-ঘেঁষা' নীতি বা 'Tilt Policy' মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে নৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন জুগিয়েছিল। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল:
- কৌশলগত মিত্রতা: পাকিস্তান স্নায়ুযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল এবং সিয়াটো (SEATO) ও সেন্টো (CENTO) সামরিক জোটের সদস্য ছিল। মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানকে দক্ষিণ এশিয়ায় সোভিয়েত প্রভাব বলয় মোকাবেলার জন্য একটি অপরিহার্য খুঁটি হিসেবে বিবেচনা করত।
- চীন-মার্কিন সম্পর্ক: তৎকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল এবং পাকিস্তান এই প্রক্রিয়ায় একটি গোপন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছিল। এই কূটনৈতিক উদ্যোগকে সফল করার জন্য নিক্সন প্রশাসন পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে।
- পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন: নিক্সন প্রশাসন অপারেশন সার্চলাইটের অধীনে পরিচালিত গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখে। এমনকি মার্কিন সিনেটর ও কংগ্রেসের বিরোধিতা সত্ত্বেও গোপনে জর্ডান ও ইরানের মাধ্যমে পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমান সরবরাহ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে, ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর অগ্রযাত্রা থামাতে এবং পাকিস্তানকে মানসিকভাবে সমর্থন দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে তাদের সপ্তম নৌবহরের 'টাস্কফোর্স-৭৪' প্রেরণ করে, যার নেতৃত্বে ছিল পারমাণবিক বিমানবাহী রণতরী 'ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ'।
তবে মার্কিন সরকারের এই নীতির বিপরীতে সেদেশের জনগণ, গণমাধ্যম এবং অনেক রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন। Archer Blood-এর মতো কূটনীতিকরা মার্কিন নীতির তীব্র সমালোচনা করে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যা "The Blood Telegram" নামে পরিচিত।
২. সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত ইতিবাচক ও সহায়ক। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এবং মার্কিন-চীন-পাকিস্তান অক্ষশক্তির বিপরীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
- ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি: ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে "শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি" স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিটি ছিল একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণে সহায়ক হয়। এই চুক্তি অনুসারে, এক পক্ষ আক্রান্ত হলে অন্য পক্ষ তাকে সহায়তা করতে দায়বদ্ধ থাকবে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে সরাসরি যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত রাখে।
- জাতিসংঘে ভেটো প্রদান: সোভিয়েত ইউনিয়ন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এক রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যখন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে, যা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন অনিশ্চিত হয়ে পড়ত, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন মোট তিনবার 'ভেটো' প্রয়োগ করে সেই প্রস্তাবগুলো বাতিল করে দেয়।
- কূটনৈতিক ও সামরিক সমর্থন: সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে কূটনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা যৌথ বাহিনীর বিজয়কে ত্বরান্বিত করে।
৩. গণচীনের ভূমিকা
মুক্তিযুদ্ধের সময় গণচীন পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার তীব্র বিরোধিতা করে। এর পেছনে মূল কারণ ছিল ভারত-চীন এবং সোভিয়েত-চীন বৈরী সম্পর্ক।
- পাকিস্তানকে সমর্থন: চীন পাকিস্তানকে তার অখণ্ডতা রক্ষার জন্য পূর্ণ সমর্থন জানায় এবং ভারতের হস্তক্ষেপকে 'নগ্ন আগ্রাসন' হিসেবে আখ্যায়িত করে। তারা পাকিস্তানকে নৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সীমিত পরিসরে সামরিক সহায়তা প্রদান করে।
- জাতিসংঘে বিরোধিতা: জাতিসংঘে চীন পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করে। তারা যুদ্ধবিরতি এবং ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানায়, যা মূলত পাকিস্তানের সামরিক পরাজয়কে ঠেকানোর একটি প্রচেষ্টা ছিল।
- সোভিয়েত-ভারত বিরোধিতা: চীনের এই অবস্থানের মূল কারণ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান মৈত্রী, যা চীন তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখত। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভারত-মৈত্রী চুক্তির কারণে চীন সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকে।
প্রতিবেশী দেশসমূহের ভূমিকা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ভারতের অবদান ছিল অবিস্মরণীয়।
১. ভারতের অনবদ্য ভূমিকা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে প্রত্যক্ষ এবং সহায়ক। ভারতের সমর্থন ছাড়া এত অল্প সময়ে স্বাধীনতা অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন হতো। এর ভূমিকা বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়:
- শরণার্থীদের আশ্রয়দান: পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়ে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। ভারত সরকার এবং তার জনগণ এই বিশাল সংখ্যক শরণার্থীকে খাদ্য, বস্ত্র, এবং চিকিৎসাসেবা দিয়ে সহায়তা করে, যা ছিল এক বিরাট মানবিক দায়িত্ব।
- মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ: ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত, প্রশিক্ষিত এবং অস্ত্রসজ্জিত করতে નિર્ણায়ক ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় ভূখণ্ডে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করা হয় এবং তাদের আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করা হয়।
- কূটনৈতিক সমর্থন ও জনমত গঠন: তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন দেশ সফর করেন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বিশ্ববাসী পাকিস্তানি গণহত্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারে।
- সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ: ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতে বিমান হামলা চালালে ভারত সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী মিলে 'যৌথ কমান্ড' বা মিত্রবাহিনী গঠন করে। এই বাহিনীর সমন্বিত আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী hızla পরাজিত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ৯৩,০০০ সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
- স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি: ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত ভুটানের সাথে প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে, যা মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি বিশাল কূটনৈতিক বিজয় ছিল।
ভারতের এই ভূমিকার পেছনে মানবিক কারণের পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থও জড়িত ছিল, যেমন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে বিভক্ত করে দুর্বল করা এবং আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করা।
২. অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ
- ভুটান: ভুটান ছিল প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি যারা ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
- নেপাল ও মিয়ানমার (বার্মা): এই দেশগুলো মুক্তিযুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। তারা মূলত এই সংঘাতকে একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখেছিল।
জাতিসংঘের ভূমিকা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল মূলত ব্যর্থতা এবং সীমাবদ্ধতায় পূর্ণ। বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও সংস্থাটি পাকিস্তানি গণহত্যা বন্ধ করতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
১. ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতা
- গণহত্যা বন্ধে ব্যর্থতা: জাতিসংঘ ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে শুরু হওয়া নৃশংস গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। সংস্থাটি এটিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে অভিহিত করে এবং সরাসরি হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকে।
- নিরাপত্তা পরিষদের অকার্যকারিতা: নিরাপত্তা পরিষদে বৃহৎ শক্তিগুলোর ভেটো ক্ষমতার কারণে কোনো ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলে সোভিয়েত ইউনিয়ন বারবার ভেটো দিয়ে তা নাকচ করে দেয়। এর ফলে নিরাপত্তা পরিষদ কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
- মহাসচিবের সীমিত ক্ষমতা: তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট ব্যক্তিগতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বৃহৎ শক্তিগুলোর সমর্থনের অভাবে তিনি কোনো জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
২. মানবিক সহায়তা
জাতিসংঘ রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হলেও মানবিক সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
- শরণার্থী সহায়তা: ভারতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক কোটি শরণার্থীর জন্য জাতিসংঘ এবং এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন, যেমন UNHCR, UNICEF, WFP, খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করে। জুন ১৯৭১ পর্যন্ত জাতিসংঘ বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য প্রায় ২৬.৩ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা প্রদান করে। এটি ছিল সেই সময়ের অন্যতম বৃহৎ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম।
উপসংহার
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এটি ছিল মূলত স্নায়ুযুদ্ধের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের একটি প্রতিফলন। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের অকুণ্ঠ সমর্থন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছিল। ভারতের মানবিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা ছিল অপরিহার্য। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাকিস্তান-ঘেঁষা নীতি এবং জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয়তা বাঙালি জাতির জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল। তবে সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য বীরত্ব এবং সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধের গতিপ্রবাহকে প্রভাবিত করলেও এর চূড়ান্ত নির্ধারক ছিল এদেশের জনগণের মুক্তি এবং স্বাধীনতার জন্য অদম্য আকাঙ্ক্ষা।
সম্পর্কিত পোস্ট
একই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) এবং শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) একটি তুলনামূলক নীতি ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন কর।
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) ও শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) নীতি ও কার্যক্রমের তুলনামূলক মূল্যায়ন। এই নিবন্ধে অর্থনৈতিক সংস্কার, বৈদেশিক নীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
The main challenge of democracy in Bangladesh is not the holding of elections, but the establishment of democratic institutions and culture. – এই উক্তিটির আলোকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূল প্রতিবন্ধকতাসমূহ (যেমন: রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) আলোচনা কর।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব, এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কীভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করছে তা এই লেখায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।