Skip to main content

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল এবং তৎপরবর্তী সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র কীভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল তা বিশ্লেষণ কর

মেফতাহুল তম্মীএকাডেমিক গবেষক ও লেখক

ভূমিকা

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম এবং অখণ্ড পাকিস্তানের শেষ সাধারণ নির্বাচন, যা সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করে, যা ছিল মূলত ছয় দফা কর্মসূচির প্রতি বাঙালি জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু নির্বাচনের সুস্পষ্ট ফলাফল সত্ত্বেও পাকিস্তানি সামরিক-রাজনৈতিক শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে নারাজ ছিল। তারা বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এই ষড়যন্ত্র, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি চরম অশ্রদ্ধা এবং পরিশেষে বাঙালির উপর পরিচালিত গণহত্যা একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের পথকে রুদ্ধ করে দেয় এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।

১৯৭০-এর নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি শাসকচক্রের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপগুলোই প্রমাণ করে যে, তারা কোনোভাবেই বাঙালির হাতে পাকিস্তানের শাসনভার তুলে দিতে প্রস্তুত ছিল না। গণতান্ত্রিক রায়কে উপেক্ষা করে সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত একটি রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়, যার মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ও ফলাফল

১৯৭০ সালের নির্বাচন আকস্মিক কোনো ঘটনা ছিল না। এর পেছনে ছিল দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত শোষণ, বঞ্চনা আর গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের এক বিস্তৃত ইতিহাস।

১. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল। মোট জনসংখ্যার ৫৬% হয়েও বাঙালিরা শাসনক্ষমতায় তাদের ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত ছিল। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যা বাঙালির 'মুক্তির সনদ' হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মুখে সেনাশাসক আইয়ুব খান ক্ষমতাচ্যুত হলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসেন। তিনি পাকিস্তানে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন এবং তারই অংশ হিসেবে ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি আইনগত কাঠামো আদেশ (Legal Framework Order - LFO) জারি করেন, যেখানে জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ১৬২টি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ১৩৮টি আসন বরাদ্দ করা হয়।

২. নির্বাচনের ফলাফল ও আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়

নির্বাচনের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুস্পষ্ট এবং তা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সকল হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেয়।

  • জাতীয় পরিষদে: আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ১৬২টি সাধারণ আসনের মধ্যে ১৬০টি এবং সংরক্ষিত ৭টি নারী আসনসহ মোট ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। ৩১৩ সদস্যের জাতীয় পরিষদে এটি ছিল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
  • পশ্চিম পাকিস্তানে: জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (PPP) পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে প্রাধান্য বিস্তার করে ৮১টি আসন লাভ করে।
  • প্রাদেশিক পরিষদে: পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

এই ফলাফল প্রমাণ করে যে, আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র পূর্ব পাকিস্তানেরই নয়, বরং সমগ্র পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণের গণতান্ত্রিক অধিকার লাভ করেছে।

৩. ফলাফলের তাৎপর্য

১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের তাৎপর্য ছিল সুদূরপ্রসারী। এটি ছিল:

  • ছয় দফা তথা বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের দাবির পক্ষে একটি গণভোট।
  • বাঙালি জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত বিজয়।
  • পাকিস্তানের দুই অংশের রাজনৈতিক বিভাজনকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে, কারণ আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানে এবং পিপলস পার্টি পূর্ব পাকিস্তানে কোনো আসনই জিততে পারেনি।
  • এই রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের भावी প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং ему সংবিধান রচনার ও সরকার গঠনের আইনগত অধিকার প্রদান করে।

ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী, বিশেষ করে সামরিক জান্তা এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোর জন্য ছিল এক বিরাট আঘাত। তারা কোনোভাবেই বাঙালির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না, যার ফলস্বরূপ শুরু হয় গভীর ষড়যন্ত্র।

১. ভুট্টো-ইয়াহিয়া আঁতাত

নির্বাচনের পর জুলফিকার আলী ভুট্টো ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেন। তিনি "সংখ্যাগরিষ্ঠতাই সব নয়" এই তত্ত্বের অবতারণা করেন এবং ক্ষমতার ভাগাভাগির দাবি তোলেন। তিনি হুমকি দেন যে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দেওয়া হলে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ তা মেনে নেবে না। ভুট্টো এবং সেনাশাসক ইয়াহিয়া খান উভয়েই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য একজোট হন। ভুট্টো তার কুখ্যাত "উধার তুম, ইধার হাম" (ওখানে তোমরা, এখানে আমরা) নীতির মাধ্যমে কার্যত পাকিস্তান বিভক্তির ঘোষণাই দেন। এই আঁতাতের মূল উদ্দেশ্য ছিল, যেকোনো মূল্যে ছয় দফার ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়ন রুখে দেওয়া এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন বজায় রাখা।

২. জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতকরণ

নির্বাচনের পর বিজয়ী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান ছিল যৌক্তিক পদক্ষেপ। ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ, ১৯৭১ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু ভুট্টো এই অধিবেশনে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সদস্যদের ঢাকা যেতে নিষেধ করেন। ভুট্টোর চাপের মুখে এবং ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ইয়াহিয়া খান ১লা মার্চ এক আকস্মিক ঘোষণায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন। এই একতরফা সিদ্ধান্ত ছিল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর চরম আঘাত এবং এটিই বাঙালি জনগণকে বিক্ষোভে ফেটে পড়তে বাধ্য করে।

৩. আলোচনার নামে কালক্ষেপণ

অধিবেশন স্থগিত করার পর পূর্ব পাকিস্তানে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়, তা সামাল দিতে ইয়াহিয়া খান আলোচনার নাটক শুরু করেন। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ঢাকায় আসেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সাংবিধানিক সংকট নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ভুট্টোও এই আলোচনায় যোগ দেন। কিন্তু এই আলোচনা ছিল একটি প্রহসন মাত্র। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কালক্ষেপণ করা এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র এনে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। আলোচনার নামে এই প্রতারণা বাঙালির শেষ বিশ্বাসটুকুও ধ্বংস করে দেয়।

৪. সামরিক প্রস্তুতি ও 'অপারেশন সার্চলাইট'

আলোচনার আড়ালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এক ভয়াবহ পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’। ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম পূর্ব পাকিস্তানে আনা শুরু হয়। জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও সামরিক কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যিনি "বাংলার মাটি চান, মানুষ নয়" বলে কুখ্যাত ছিলেন। এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল, ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র বাঙালির উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়া, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নির্মূল করা এবং সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানকে বলপূর্বক নিয়ন্ত্রণে আনা।

সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ যেভাবে অনিবার্য হয়ে ওঠে

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক আক্রমণ একটি অহিংস ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরিত করতে বাধ্য করে।

১. গণতান্ত্রিক রায়ের অস্বীকৃতি

মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠার প্রধান কারণ ছিল ১৯৭০-এর নির্বাচনের গণতান্ত্রিক রায়কে প্রত্যাখ্যান করা। বাঙালিরা ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচন করেছিল এবং স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকরা সেই রায়কে অস্বীকার করে প্রমাণ করে যে, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না এবং বাঙালির অধিকারকে সম্মান করতে প্রস্তুত নয়। এই বিশ্বাসঘাতকতা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সহাবস্থানের সমস্ত সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয়।

২. অহিংস আন্দোলন থেকে সশস্ত্র প্রতিরোধ

১লা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার পর বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ২রা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত কার্যত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই দেশ পরিচালিত হচ্ছিল। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"। এই ভাষণটি ছিল সশস্ত্র প্রতিরোধের জন্য বাঙালি জাতিকে প্রস্তুত করার এক দ্ব্যর্থহীন আহ্বান। পাকিস্তানিরা যখন আলোচনার পথ বন্ধ করে শক্তির পথ বেছে নেয়, তখন বাঙালির সামনে সশস্ত্র প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।

৩. ২৫শে মার্চের গণহত্যা

সব আলোচনার অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানার ইপিআর সদর দপ্তরসহ সারা ঢাকায় নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই রাতে চালানো হয় ইতিহাসের এক নৃশংসতম গণহত্যা। এই পাশবিক আক্রমণ শান্তিপূর্ণ সমাধানের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়। একটি রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী যখন তার নিজের জনগণের উপর এভাবে হামলা চালায়, তখন সেই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের আর কোনো ভিত্তি থাকে না। এই গণহত্যাই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধকে একটি অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতায় পরিণত করে।

৪. স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনা

২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের পূর্ব মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে প্রেরিত সেই ঘোষণায় তিনি যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় বাঙালি পুলিশ, ইপিআর, সেনা সদস্য এবং সাধারণ জনতা okam প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং ৯ মাসব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়।

উপসংহার

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন বাঙালি জাতিকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের অধিকার আদায়ের একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় ছিল সেই গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার চূড়ান্ত প্রতিফলন। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক-রাজনৈতিক শাসকগোষ্ঠী সেই जनादेशকে মেনে নেওয়ার পরিবর্তে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয়। ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি, আলোচনার নামে প্রতারণা এবং পরিশেষে ২৫শে মার্চের গণহত্যার মাধ্যমে তারা প্রমাণ করে যে, বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে তারা সামরিক শক্তি দিয়ে দমন করতে চায়।

এই নৃশংসতা ও বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিক্রিয়ায় বাঙালি জাতির সামনে সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। সুতরাং, এটি সুস্পষ্ট যে, ১৯৭০-এর নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র এবং তাদের গৃহীত দমনমূলক পদক্ষেপগুলোই একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরিত করেছিল, যা ছিল বাঙালির অস্তিত্ব, আত্মমর্যাদা এবং স্বাধীনতা রক্ষার এক অনিবার্য সংগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

একই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট

খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) এবং শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) একটি তুলনামূলক নীতি ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন কর।

খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল (১৯৯১-৯৬) ও শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) নীতি ও কার্যক্রমের তুলনামূলক মূল্যায়ন। এই নিবন্ধে অর্থনৈতিক সংস্কার, বৈদেশিক নীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

পড়ুন

The main challenge of democracy in Bangladesh is not the holding of elections, but the establishment of democratic institutions and culture. – এই উক্তিটির আলোকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূল প্রতিবন্ধকতাসমূহ (যেমন: রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) আলোচনা কর।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রধান প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, দুর্বল সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব, এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কীভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করছে তা এই লেখায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

পড়ুন